Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

Tour : সোমনাথ থেকে দিউ এর পথে

On-the-way-from-Somnath-to-Diu

সোমনাথ থেকে দিউ এর পথে

অজয় মজুমদার

সোমনাথ থেকে আমরা দিউ এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ৮ টায় রওনা হয়ে বেলা ১১ টায় দিউ পৌঁছাই৷ আমরা উঠলাম হোটেল গ্যালাক্সিতে৷ সোমনাথ থেকে দিউ এর দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার৷ গ্যালাক্সি হোটেলটি দিউ বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। বাস স্ট্যান্ডের সামনের দিকে তাকালেই আরব সাগর দেখা যাবে৷ এই হোটেল অনেকেরই পছন্দ হয়নি। কারণ, এখানকার সিঁড়িগুলি সংকীর্ণ এবং খাড়া খাড়া। তাছাড়া লিফট ছিল না।  

হোটেলের ঘরের জানলা থেকে বিস্তীর্ণ আরব সাগর দেখা যায়। ওখানে ৫০ টাকার বিনিময়ে সারাদিন সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। আমাদের পারিবারিক দল থেকে একটা সাইকেল ভাড়া নিয়েছিল, যখন তখন বাজার যাওয়ার জন্য৷ সেই সাইকেলে অনেকটাই ঘুরে এলাম। লাঞ্চ সেরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়ি দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। 

দিউ পশ্চিম ভারতের একটি ছোট্ট এলাকা। দমন গঙ্গা নদীর মুখে একটি ছোট্ট শহর৷ আর দিউ গুজরাটের উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ। গোয়া এবং দাদ্রা ও নগর হাভেলি সহ দুটি ছিটমহল ১৫৩৯ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ শাসনের অধীনে ছিল। পরে ভারত সরকার তাদের পুনরুদ্ধারে সামরিক পদক্ষেপ করেছিল। 

গোয়া নিজে থেকেই একটি রাজ্য হওয়ার আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলটি গোয়া দমন এবং দিউ এর বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল৷ দমন এবং দিউ দুটিই আলাদা জেলা৷ দুটি আলাদা দ্বীপ। দুর্গ ও পর্তুগিজ ক্যাথিড্রালের জন্য বিখ্যাত। দিউ ফোর্টটি আকর্ষণীয় স্থান। ভারতের পশ্চিম উপকুলে অবস্থিত একটি পর্তুগিজ ভারতের প্রতিরক্ষামূলক দুর্গের অংশ হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। 

১৫৩৫ সালে গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ এবং সম্রাট হুমায়ুন যখন পর্তুগিজদের দ্বারা একটি প্রতিরক্ষা মৈত্রী গড়ে তোলেন, তখন দুর্গাটি নির্মিত হয়েছিল৷ দুর্গটি দিউদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে ভারতের প্রতিরক্ষামূলক দুর্গের অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। দিউ একটি মাছ ধরার শহর। বর্তমান দিউ পুরসভার অন্তর্ভুক্ত৷ জেলা কালেক্টর সালনী রাই আইএএস৷ এলাকা চল্লিশ কিলোমিটার। ১৯১১ সালের গণনা অনুযায়ী জনসংখ্যা ৫২,০৭৬। দিউতে একটি কলেজ আছে।

সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে বিখ্যাত নাগোয়া সমুদ্র সৈকত। অন্যান্য সৈকত হলো ঘোগলা, জলন্ধর, চক্রতীর্থ এবং গোমতীমাতা৷ ওল্ড দিউ তার পর্তুগিজ স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। দিউ দুর্গ জেলার সবচেয়ে দর্শনীয় ল্যান্ডমার্ক| দুর্গটি সমুদ্রের পাশে একটি টিলার উপর নির্মিত৷ 

তিনটি পর্তুগিজ বারোক গির্জা রয়েছে, যার মধ্যে সেন্ট পলস চার্ট ১৬১০ সালে তৈরি হয়েছিল৷ সেন্ট থমাস চার্চ একটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ১৯৫৩ সালে নির্মিত৷ এখন একটি হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া রয়েছে জলন্ধর সমুদ্র সৈকতের কাছে নাইদা গুহা, গঙ্গেশ্বর মন্দির৷ 

দিউ প্রধানত সাদা বালির সৈকতের জন্য বিখ্যাত৷ নাগোয়া সমুদ্র সৈকতটি দেখার মতো৷ স্বচ্ছ নীল জল এবং সাদা বালি, দোলাতে থাকা পাম গাছের সাথে, হাওয়াইয়ের মতো বিদেশি পরিবেশ তৈরি করে৷ পাম গাছের পাশাপাশি রয়েছে হোকা গাছ, যা দিউতে একচেটিয়া৷ এই সমুদ্র সৈকতে সাঁতার কাটা নিরাপদ বলে মনে করা হয়। 

নাগোয়া সৈকতে নানা ধরনের রাইডিং করার সুযোগ রয়েছে৷ বেলুন ওড়া, ওয়াটার স্কুটার, স্পিডবোট ও নানা ধরনের রাইডিং এর ব্যবস্থা রাখা আছে। আশেপাশে প্রচুর হোটেল ও ড্রিংস এবং আইসক্রিম পার্লার রয়েছে৷ পৃথকভাবে দিউ বেড়াতে যাওয়ার জন্য আদর্শ স্থান হয়ে উঠতে পারে। 

কিন্তু দিউকে সেভাবে কোন হোটেল গড়ে বা ভ্রমণের আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়নি৷ প্রকৃতি দেবী উজাড় করে সম্পদকে দান করেছে, যা দেখতে হবে দুচোখ ভরে৷ সন্ধ্যার পর আমরা হোটেল গ্যালাক্সিতে ফিরে গেলাম। রাতে খাওয়ার পর দিউয়ের রাস্তায় অনেকটা হাঁটলাম। এখানে সামনেই একটা উৎসব আছে, এখন তার প্রস্তুতি চলছে৷



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন