Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বনগাঁ মহকুমার মানুষের ভূমিকা (‌প্রথম পর্ব)‌

 ‌

Bongaon-in-freedom-movement

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বনগাঁ মহকুমার মানুষের ভূমিকা (‌প্রথম পর্ব)‌          

পীযূষ হালদার  

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আন্দোলন শুরুর আগে ছাড়া ছাড়াভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নানান সম্প্রদায়ের মানুষের আঞ্চলিকভাবে বিদ্রোহ হয়েছিল। সেসব বিদ্রোহের মধ্যে কৃষক বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা ছিল বনগাঁ মহকুমার কৃষকদের। নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে মহকুমার কৃষক আন্দোলন একটা সুবিদিত অধ্যায়। একে বাদ রেখে স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা টানা যায় না। 

মোল্লাহাটি ছিল বেঙ্গল ইন্ডিগো কোম্পানির অধীনে মোট সতেরোটি নীলকুঠির প্রধান কার্যালয়। ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দ  থেকে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা শোনা যায়। কৃষকরা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে সারা দেশময় নীল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। 

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বনগাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্যে প্রকাশ পায়, কাঠগড়া কনসার্নের অন্তর্গত ইলিশমারী কুঠির আশেপাশে নারায়নপুর, বড়খানপুর গ্রামে প্রথম গোলমাল শুরু হয়। নীল চাষ করবেন না বলে কৃষকরা আপত্তি করেন এবং থানা আক্রমণ করেন। (Indigo com, report p-83 of DJ Macneile)। 

আবার শিশিরকুমার ঘোষ ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের এক অমৃতবাজার পত্রিকায় লেখেন– চৌগাছাতে প্রথম নীল বিদ্রোহের সূচনা হয়। সে যেখানেই হোক, এটা বোঝা যায় বনগাঁ মহকুমা ছিল নীলবিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র। 

এই বিদ্রোহের প্রধানত নেতৃত্ব দেন দিগম্বর বিশ্বাস এবং বিষ্ণুচরন বিশ্বাস। দিগম্বর বিশ্বাসের বাড়ি ছিল কৃষ্ণনগরের কাছে পোড়াগাছা গ্রামে। বিষ্ণুচরন বিশ্বাসের বাড়ি চৌগাছা। তাঁরা দুজনেই নীলকুঠিতে উচ্চ পদে চাকরিরত ছিলেন। 

নীলকর সাহেবদের অত্যাচার তাঁরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁরাই নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য উৎসাহিত করেন। এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে। এর ফলে তাঁদের নিজেদের পরিবারের উপর অত্যাচার নেমে আসে। 

১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কৃত্রিম নীল উৎপাদন শুরুর পর প্রাকৃতিকভাবে নীলচাষ বন্ধ হয়ে যায়। বনগাঁর কুঠিবাড়িতে এসে দিগম্বর বিশ্বাস বসবাস করা শুরু করেন। এছাড়াও, গোয়ালবাড়ির কালাচাঁদ মন্ডলকেও নীল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা শোনা যায়। একারণেই বনগাঁ মহকুমার নাম নীল বিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। 

এবার আমরা আসব মূল স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্যায়। এই পর্যায়ে যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের নাম এবং পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করব।  

*প্রমথনাথ মুখোপাধ্যায়‌—  মাঝেরগ্রামের গরিবপুরের এই সন্তান বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এরপর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন এবং বিদেশী পণ্য বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন। সেই কারণে তাকে দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস করতে হয়। 

*ধীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়—  বনগাঁর ব্যারাকপুরের কৃতিসন্তান। প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। 

*ডাঃ ইন্দ্রনারায়ন সেনগুপ্ত—  জন্ম ঢাকার বিক্রমপুরে হলেও চিকিৎসার তাগিদে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বৈরামপুর গ্রামে চলে আসেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে ১৯৩০, ১৯৩১, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পরপর গ্রেপ্তার বরণ করেন। সেইসময় স্বল্পকালের জন্য তাঁকে জেল খাটতে হয়েছিল।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন