শুভংকর সাহা
পৃথিবীতে মানুষের পদচারনার ইতিহাস যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখি সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে তাম্রযুগ, ব্রোঞ্জযুগ, লৌহযুগ হয়ে আজকে যে যুগে আমরা এসে উপস্থিত হয়েছি, তাকে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে প্লাস্টিক যুগ। হালকা, টেকসই, কম খরচ– এসব বিবেচনা করে প্লাস্টিক আজ আমাদের জীবনের সর্বত্র জায়গা দখল করে বসে আছে।
টিভি, কম্পিউটার থেকে খাবারের প্যাকেট, বসার চেয়ার থেকে শোয়ার খাট– সর্বত্র আজ প্লাস্টিকের অবাধ যাতায়াত। মনে করতে পারেন শেষ কবে লস্যি বা ডাব খেয়েছেন গ্লাসে চুমুক দিয়ে?
মনে করতে পারেন শেষ কবে বাজার থেকে একটাও ক্যারি প্যাকেট আনেননি বাড়িতে? মনে না থাকারই কথা, কারন এত সহজলভ্য প্লাস্টিকের স্ট্র বা ক্যারি ব্যাগ যে তা আমাদের দৈনন্দিনতায় মিশে গেছে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো।
এত সহজ স্বাভাবিক জীবনধারণের একটা বিষয়কে গত পয়লা জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে নিষিদ্ধ করে দিল কোন আক্কেলে? এ তো একেবারে মশাই আমাদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ!
পঁচাত্তর মাইক্রনের নিচে ক্যারি ব্যাগ নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের কাঁটাচামচ প্লেট, গ্লাস, স্ট্র। কী করে চলবে আমাদের জীবন? আসলে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে। যেকোনওদিন বসে যেতে পারে সভ্যতার রথের চাকা।
কয়েকটি তথ্য তুলে ধরি আপনাদের সামনে, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। প্রতিদিন আমাদের দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় মোটামুটি ২৫ হাজার ৯৪০ টন! তার মানে এক বছরে প্রায় সাড়ে ৯ মিলিয়ন টন! এককথায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে জঞ্জালের পাহাড়।
এর খুব সামান্য অংশই রিসাইক্লিং হয়। বাকিটা পড়ে থাকে আমাদের মাটিতে, আমাদের পাহাড়ে, আমাদের নদীতে, আমাদের পুকুরে, আমাদের সমুদ্রে। প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে আমাদের শরীরে। নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র, টাল খাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচতেই এই নিষেধাজ্ঞা খুব জরুরি ছিল। আইন হয়েছে বলেই তা মানতে হবে, এতটা শিক্ষিত নাগরিক আমরা নই! তাই সচেতনতার প্রচার যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি কঠোর হাতে আইনকে বলবৎ করা। আর জরুরি পরিবেশবান্ধব বিকল্প কি কি হতে পারে, তা নিয়ে সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের মধ্যেকার নিত্যকার মত বিনিময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন