Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১

সেকালের দুর্গোৎসবের তুবড়ি প্রতিযোগিতা

 

Tubri-competition-of-the-old-fort-festival

সেকালের দুর্গোৎসবের তুবড়ি প্রতিযোগিতা        

অজয় মজুমদার

সেকালের দুর্গোৎসবে পাড়ায় পাড়ায় তুবড়ি প্রতিযোগিতা ছিল খুবই আকর্ষণীয় ৷ অনেক শিক্ষার্থী পরম আগ্রহের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নাম দিতো। প্রতিযেগিতায় স্থান পেলে একাদশীর দিন অর্থাৎ বিসর্জনের পরের দিন পুরষ্কৃত করা হতো ৷ সবাই অধীর আগ্রহে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতো ৷


ছেলেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বেগুন কাঠ, কিংবা কুল কাঠ বা আকন্দ কাঠ সংগ্রহ করে বেড়াতো। একসময় এই কাঠগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে কাঠ কয়লা তৈরি করা হতো। সেই কাঠ কয়লা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করে মোটা কাপড় দিয়ে ছেঁকে মিহি করে রেখে দেওয়া হতো৷ এছাড়াও প্রয়োজন হতো লোহা চুর্ণ, সুরা,গন্ধক এবং তুবড়ির নিচের অংশটি বন্ধ করতে এক কিলো মতো এঁটেল মাটি নিয়ে শুকিয়ে ভেঙে গুঁড়ো করে নিতে হতো ৷ 


কেরোসিন তেল দিয়ে চেপে দিলে তুবড়ির তেজ বেড়ে যায়। খুব ভালো ঘট না হলে আবার তুবড়ি ফেটে যেতে পারে ৷ লোহাচুর্ণ কম বা বেশি দিলে কিংবা চুলের ছোট বা বড় দানার আনুপাতিক অনুযায়ী তুবড়ি স্ফুলিঙ্গের ধরন পাল্টে যায় ৷ প্রতিযোগিতার আবার নিয়ম ছিল ঘট কিন্তু ফাটা চলবে না ৷ স্ফুলিঙ্গ যতই উপরে উঠুক না কেন, ঘট ফাটা চলবে না। ঘট  ফাটলেই ডিসকোয়ালিফাইড ৷ 


শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুজোর আগে এই উন্মাদনা একটা স্বতঃস্ফূর্ত মৌলিকত্বের আবেদন রাখে৷ আলুভাতে মার্কা সন্তান তৈরি হয় না ৷ এইরকম ডানপিঠে ছেলেরা কিন্তু লেখাপড়ায় ভালো হোক বা না হোক, তারা কিন্তু সমাজ গঠনের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতো ৷ মানুষের উপকারে লাগতো ৷ আর কখনোই ভেঙে পড়তো না ৷ তাদের সব সময়ই পজিটিভ ভাবনা থাকতো, যে সব কিছু আনন্দের সঙ্গে করে ৷ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা পরবর্তী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  


বর্তমানে তুবড়ি তৈরি করার আগ্রহ প্রকাশ করতে সেভাবে দেখা যায় না ৷ আর তাছাড়া পাড়ায় পাড়ায় কোনও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও নেই যে, শিক্ষার্থীরা আকর্ষণ অনুভব করবে ৷ এখনকার অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের এইসব প্রতিযোগিতায় নাম দিতেই দেবেন না। অথচ তখনকার অভিভাবকেরা অনেক সময় খবরই রাখতেন না যে, তাঁদের ছেলে তুবড়ি তৈরীতে তুখোড়। এই বিষয়ে একেবারে বিশেষজ্ঞ। বাবা জানলে রাগ করতে পারেন। তাই পুরষ্কার নিয়ে বাড়িতে এসে তা মাকে ফিসফিস করে বলতো। 


পুজোর দিনগুলিতে কৈশোরের শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রতিমা দর্শন করে বেড়াতো। বনগাঁ শহরে বেশকিছু পুজো দেড়'‌শ বছরের উপরে হবে। সেগুলো সাধারণত বাড়ির পুজো ছিল ৷ সে সব পুজোর জৌলুস এমনিতেই এখন অনেকটাই কম ৷ সেসব পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ৷ কোথাও কোথাও ক্লাব এগিয়ে এসে সেই সব পুজোগুলি করছে। 


তুবড়ি তৈরি করার মধ্যে দিয়ে একটা মৌলিক ভাবনার বিকাশ তখনকার দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে উঠত ৷ এই আগ্রহকে খাটো না করে, কোনও কোনও পাড়ায় কেউ কেউ এগুলি হাতে ধরে শিখিয়ে দিতেন ৷ অবশ্য যাদের আগ্রহ বেশি ছিল ৷ তাদের অনেকের জীবনে এখান থেকেই বিজ্ঞানে হাতে খড়ি হয়েছে ৷ তখনকার দিনে পোশাক দেখে কোন বাড়ির ছেলে মেয়ে তা বোঝা যেত। কারণ, তখন একটা থান দিয়েই গোটা পরিবারের জামা–প্যান্ট তৈরি হতো ৷ 


ছোটবেলার বন্ধুদের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাঁরা সব সংসার, নাতি–নাতনি নিয়ে ব্যস্ত। সেকালের দুর্গোৎসব আর একালের দুর্গোৎসবের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সেই অভিব্যক্তির আলোকে দুর্গোৎসবের পরিবর্তন নাতি–নাতনি কে দেখানো এখন আমার বন্ধুদের অন্যতম কাজ ৷



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন