Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

বেদব্যাস ও গুরুপূর্ণিমা

 

Bedavas and Gurupurnima

বেদব্যাস ও গুরুপূর্ণিমা   

সুভাষ  মোহান্ত


ব্যাস একক নয়। ব্যাস শব্দের অর্থ সমষ্টি। 'সৃষ্টি নির্মলতা'র জন্য 'দেব' বা 'ঋষি' অভিধায় ভূষিত।প্রতিভাধররা যে যে কালে, যে যে মূর্তি গ্রহণ করে বেদ, ইতিহাস রচনা ও বিভাগ করেন তাঁরাই ব্যাস। ব্যাসরা বেদ বিভাগকারী শুধু নন, ইতিহাসকারও। বিভিন্ন লেখকের লেখা থেকে সারমর্ম গ্রহণ করে একত্রে গ্রথিতকরণকারীর নাম ব্যাস। ব্যাসদেব দের বেশ কিছু শিষ্য পরম্পরা, বংশ পরম্পরা, আবার বেশ কিছু যোগ্য পরম্পরা ছিল। এই ব্যাসদেব দের লেখা পুরোপুরি সত্যনিষ্ঠ। এদের লেখনি ছিল- বর্তমান আফগানিস্তান (গান্ধার) থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (ব্রহ্মভূমি), উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিনে শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূভাগ নির্ভর। পরীক্ষিতের রাজত্বকালের শেষ মুহূর্তে 'কলি'র প্রবেশ (মতান্তরে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর)। এরপরেও হাজারো ব্যাস অর্থাৎ ইতিহাসকার এসেছেন। কিন্তু কলির সূচনাকাল থেকে ব্যাসদের মধ্যেকার সত্যনিষ্ঠা অনেকাংশে বিলুপ্ত হয়েছে। এইসব ব্যাসরা বহু ক্ষেত্রে নিজের ঢাক নিজে পিটিয়েছেন, কখনো আবার রাজন্যবর্গের নিখাদ তাঁবেদারি করেছেন। এরা দেব বা ঋষি অভিধা হারিয়েছেন, হয়েছেন 'ইতিহাসকার'।

প্রাক্ আর্যযুগ থেকে যে ২৮ জন ব্যাস ভারতীয় দর্শন ভিত্তিক ইতিহাসকে নিখুঁতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন তারা হলেন – স্বয়ম্ভু,  প্রজাপতি মনু,  ঊশনা,  বৃহস্পতি, সবিতা, মৃত্যু, ইন্দ্র, বশিষ্ঠ, সারস্বত,  ত্রিধামা, ত্রিবৃষা, ভরদ্বাজ, অন্তরীক্ষ, বপ্রী,  ত্রয্যারুণ, ধনঞ্জয়, কৃতঞ্জয়, ঋণজ্য, ঋষি ভরদ্বাজ, গৌতম, হর্যাত্মা, বেণ, তৃণবিন্দু, ঋক্ষ, শক্ত্রি, পরাশর, জাতুকর্ণ এবং কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। দুঃখের বিষয়, এই ব্যাসদেবদের বহু দলিল বা নথি আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু নথি কালগর্ভে বিলীন হয়েছে, বেশ কিছু হানাদারদের অগ্নাঘাতে হয়ে গেছে অগ্নিগোলক। এই ব্যাসদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। বেদব্যাসের জন্ম ইতিহাস কিন্তু বেশ রহস্যে মোড়া। উপরিচর রাজার ঔরসে অদ্রিকা নামক মাছের গর্ভে, যমুনা নদীতে যমজ দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। একটি পুত্র একটি কন্যা। অপূর্ব লাবণ্যবতী কন্যাটির পালক দাসরাজা। কন্যাটির নাম ছিল সত্যবতী। এছাড়াও তিনি পরিচিত ছিলেন মৎস্যগন্ধা, গন্ধবতী, যোজনগন্ধা নামে। নৌকায় যাত্রী পারাপার কালীন সত্যবতীর রূপ- লাবণ্য- সুস্বাস্থ্য- উদ্ধত যৌবন- মিষ্টি হাসি ও ভাষায় মোহিত ঋষি পরাশর, সত্যবতীর সঙ্গে মিলিত হন। 

দেবশক্তির অধিকারী পরাশর- সত্যবতীর মিলন এবং সঙ্গে সঙ্গেই একটি পুত্রের জন্ম । ব্রাহ্মণ ঋষির ঔরসে, শূদ্র রমণীর গর্ভফল। ঘটনাকাল- অষ্টাবিংশ দ্বাপরযুগ (আজ থেকে ৫৩৫০ বছর পূর্বে)। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, দ্বিপ্রহরেই জন্ম। সদ্য চলৎশক্তি সম্পন্ন সেই পুত্রকে গঙ্গা- যমুনার কাছে একটি দ্বীপে (এলাহাবাদ) নির্বাসন দেওয়া হয়। সত্যবতী ফিরে পান তাঁর কুমারিত্ব। শরীরের মৎস্যগন্ধ (আঁশটে গন্ধ) দূর হয়। হয়ে যান গন্ধবতী- যোজনগন্ধা। বিশালদেহী ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, তাই নবজাতকের নাম হল কৃষ্ণ। দ্বীপে জন্ম, দ্বীপে স্থাপন, দ্বীপে তপস্যা ও সিদ্ধি তাই দ্বৈপায়ন। বেদকে চার ভাগে বিভক্ত করেন তাই বেদব্যাস। সুমন্ত, জৈমিনি, পৈল, বৈশম্পায়ন ও পুত্র শুক এর মত পঞ্চহস্ত, অগ্নিতুল্য পঞ্চশক্তি সম্পন্ন (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম) শিষ্যলাভ, তাই তাঁর নাম পঞ্চাগ্ন। শ্রেষ্ঠ,পরম শ্রেষ্ঠতম সৃজক, কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাই কবিবর। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এর ইতিহাস লেখক; কালজয়ী ও জ্ঞানী তাই ত্রিকালজ্ঞ। 

 


         

শ্রাবণ পূর্ণিমা '‌গুরুপূর্ণিমা' নামে প্রসিদ্ধ। মহর্ষি ব্যাস এর জন্মতিথি। ২৮ জন ব্যাসের পুরোধা, সপ্ত কল্পান্ত জীবি(৬৩২ কোটি বছর জীবিত থাকবেন), অনন্যতম- বেদ বিভাগকার, পুরাণকার, ইতিহাস, দর্শন, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা, যোগবিদ্যা, রাজনৈতিক গুরু, মহাভারত, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ গীতা, বদরায়ন সূত্র ও খিল এর জন্মদাতা। তাই, অমর কালোত্তীর্ণ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকে ভারতবাসীরা 'ব্যাস- তিথি'তে অনন্তকোটি হৃদয়ের প্রণাম জানায়। তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। জানায়, বিরলতম প্রতিভার স্বীকৃতি। ঋষি বেদব্যাস এর সূত্র ধরেই গুরুপূর্ণিমায় প্রণতি পান- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, দেবাদিদেব শংকর, সপ্তঋষি, মহর্ষি গৌতম বুদ্ধ, পৃথিবীর সকল দুর্লভ প্রতিভার গুরু, শিক্ষক, পন্ডিত, শিক্ষা-দীক্ষা দাতাগণ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন