সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতীয় ক্রিকেটের 'ভগবান' বিরাট কোহলি। তাঁর প্রতিটি শট, প্রতিটি উদযাপন কোটি সমর্থকের প্রাণের স্পন্দন। মাঠে ব্যাট হাতে তাঁর ক্ষিপ্রতা যেমন নজর কাড়ে, তেমনই মাঠে ঢুকে তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে ভক্তদের দৌড়ঝাঁপও এখন নিয়মিত দৃশ্য হয়ে উঠছে। আর তাতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা।
রাঁচির ওয়ানডেতে ম্যাচের সেরা হয়ে হাসিমুখে দাঁড়ানো কোহলির সামনে আচমকা হাজির হয়ে যান হুগলির আরামবাগের ২০ বছরের সৌভিক মুর্মু। চেন্নাইয়ে সাইকেল চালিয়ে গিয়ে আইপিএল দেখার অভিজ্ঞতা থাকা এই আদিবাসী ছাত্র এবার জমিয়ে রাখা টাকায় রাঁচি গিয়েছিলেন তাঁর ‘ঈশ্বর’কে দেখতে। আইন-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে সরাসরি মাঠে ঢুকে নতজানু হয়ে কোহলির পায়ে প্রণাম করেন তিনি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে।
বাড়িতে খবর পৌঁছাতেই দুশ্চিন্তায় পরিবারের ঘুম উড়েছে। সৌভিকের এই ঘটনা হয়তো আবেগের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এর রেশ কাটার আগেই রায়পুরেও সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। ড্রিঙ্কস ব্রেকের সময় এক সমর্থক নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে দৌড়ে পৌঁছে যান কোহলির কাছে। নিরাপত্তাকর্মীদের ধাওয়া সত্ত্বেও মুহূর্তেই তারা মাঠে ঢুকে পড়তে সক্ষম হন।
বিরাটের পা ছুঁয়ে নেওয়ার পরেই ওই সমর্থককে আটক করা হয়। দুই ম্যাচে টানা একই ঘটনা ক্রিকেট মহলকে বেশ শঙ্কিত করেছে। খেলোয়াড়, অফিসিয়াল এবং দর্শকদের জন্য বড় কোনও বিপদের সম্ভাবনা যে এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের মত– “সেলিব্রেটি-উন্মাদনা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মাঠে যেকোনও ক্ষতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।”
প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্থানীয় পুলিশ ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। গ্যালারি থেকে মাঠের মাঝখানে পৌঁছাতে ৩–৪ স্তরের বাধা থাকার কথা। তবু পরপর দুই ম্যাচে বাধাহীন প্রবেশ কিন্তু বড় লঙ্ঘন। কোহলি যতই উদার হোন, তাঁর উপস্থিতি যতই অসংখ্য সমর্থকের হৃদয়ে স্থান পাক, মাঠে এইরকম অনুপ্রবেশ খেলার শৃঙ্খলা এবং খেলোয়াড়দের সুরক্ষা– দুই-ই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ভক্তের আবেগ ক্রিকেটের সৌন্দর্য। কিন্তু নিরাপত্তার দেয়াল ভেঙে তা প্রয়োগ করলে পুরো খেলার ভবিষ্যৎই বিপন্ন হতে পারে। কোহলি নিজে সব বাধাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে আবারও সেঞ্চুরি করেছেন। মাঠ থেমেছে, তাঁর ব্যাট থামেনি। কিন্তু একের পর এক নিরাপত্তাভঙ্গ ঘটনার পরে শুধু ভক্তরা নয়, স্টেডিয়াম সংস্থাও এখন চাপের মুখে। অতি উৎসাহী ভক্তের ভালবাসা যেন বিপদের কারণ না হয়ে ওঠে, সেটাই এখন সময়ের দাবি।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন