সমকালীন প্রতিবেদন : প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে বহরমপুরে পৌঁছেছিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। ঠিক সেই সময়ই দলের তরফে জানানো হয়, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিদ্ধান্তের খবর পেয়েই ক্ষোভে সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। জানান, শুক্রবার অথবা সোমবারই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন এবং ২২ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে নিজের নতুন দল ঘোষণা করবেন।
হুমায়ুনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরি সংক্রান্ত মন্তব্য। ৬ ডিসেম্বর শিলান্যাসের পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য ঘিরেই বিতর্ক চরমে ওঠে। দলের দাবি, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি উস্কানিমূলক মন্তব্য চালিয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম জানান, তিন দফা শোকজ করা হয়েছিল হুমায়ুনকে। কিন্তু তাতেও পরিবর্তন না হওয়ায় তাঁকে সাসপেন্ড করা ছাড়া উপায় ছিল না।
তাঁর অভিযোগ, “বিজেপির হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন হুমায়ুন। দলবিরোধী কার্যকলাপ খুব স্পষ্ট।” ফিরহাদের কটাক্ষ, বাবরি মসজিদের নাম টেনে বিভাজনের রাজনীতি করছেন হুমায়ুন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মসজিদ করতে চাইলে বাবা-মায়ের নামেও তো হতে পারত।” পাশাপাশি হুমায়ুনের একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যকেও হাকিম তুলোধনা করেন।
এদিকে, হুমায়ুন কবীর সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্তে তিনি নড়বেন না। তাঁর দাবি, “বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ হবেই, নির্ধারিত দিনেই শিলান্যাস হবে। তোলাবাজ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নতুন দল গড়ব। ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেব।” পাশাপাশি তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁকে হেনস্থা বা খুন করা হতে পারে। নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বুধবারই হুমায়ুনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর আশঙ্কা ছিল, ওই মন্তব্যের জেরে রাজ্যে অশান্তি তৈরি হতে পারে। রাজ্যপালের নির্দেশের ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল কঠোর পদক্ষেপ করল।
গত কয়েক মাস ধরেই নানা মন্তব্য ও অবস্থানের জন্য বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ভরতপুরের এই বিধায়ক। কখনও জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, কখনও নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ক্রমেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার সাসপেন্ডের সিদ্ধান্তে সেই পথ আজ কার্যত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হল।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন