সমকালীন প্রতিবেদন : অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে যে ছন্দে শেষ করেছিলেন, রাঁচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচে যেন সেই গতিতেই শুরু করলেন বিরাট কোহলি। মাঠে নামার পর প্রথমদিকে সামান্য সতর্ক থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ছন্দে ফেরেন ভারতের এই তারকা ব্যাটার। নিখুঁত শট নির্বাচন, ধৈর্য এবং পরিমিত আগ্রাসনের মিশেলে গড়ে ওঠে তাঁর লড়াকু সেঞ্চুরি, যা শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় রাঁচিতে তাঁর তৃতীয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ শতরানে।
কলকাতার দর্শকদের মতোই রবিবার রাঁচির জেএসসিএ স্টেডিয়ামেও দেশীয় ভক্তরা উপচে পড়েছিলেন প্রিয় তারকার খেলা দেখার জন্য। আর তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করেন কোহলি। তিন নম্বরে নেমে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেন বড় ইনিংসের। ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি, তাও ছক্কা মেরে। জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বড় কিছু করতে চলেছেন। প্রোটিয়া বোলারদের আগ্রাসী স্পেলে শুরুতে খোলস গুটিয়ে খেলেন কোহলি।
কিন্তু পরে মার্কো জনসন, নান্দ্রে বার্গারদের বিরুদ্ধে একের পর এক নজরকাড়া শট মেরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ১০২ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক, ওয়ানডে কেরিয়ারের ৫২তম সেঞ্চুরি। এর ফলে একক ভাবে ভেঙে দিলেন সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনও একটি ফরম্যাটে সর্বাধিক শতরানের মালিক এখন বিরাট কোহলি। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩।
৩৭ বছর বয়সেও কোহলির ব্যাট থেকে এখনও বয়ে যায় একই ধারালো ছন্দ– এদিন তা আবারও প্রমাণ হল। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে তাঁর দ্রুততা কিংবা তরুণ সতীর্থদের প্রতি নিয়মিত পরামর্শ– সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল তিনি যেন প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। দলের অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও নিজের জায়গা ধরে রেখে, আগ্রাসন ও সংযমের মিশেলে দলকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যান তিনি।
অবশেষে ১২০ বলে ১৩৫ রান করে আউট হন কোহলি। তাঁর ইনিংসে ছিল ১১টি চার এবং ৭টি ছক্কা। শচীনের অসাধারণ রেকর্ডকে পেছনে ফেলে তিনি নতুন মাইলফলকের দিকচিহ্ন রেখে গেলেন। যাঁকে 'ক্রিকেটের ঈশ্বর' বলা হয়, তাঁর রেকর্ডের নাগাল পাওয়া যে সম্ভব, সেটা দেখানোর দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন কোহলি। যদিও সেই কক্ষপথে পৌঁছনো কঠিন, তবুও ইতিহাস বলবে, একজন মানুষ অন্তত ঈশ্বরের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার সাহস দেখিয়েছেন।
সব বাধা, সমালোচনা আর দলগত পরিবর্তনের জটিলতার মধ্যেও বিরাট কোহলি আবার প্রমাণ করলেন– ফর্ম সাময়িক হলেও ক্লাস চিরস্থায়ী। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর লড়াই এখনও থেমে যায়নি। বরং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন উদ্যমে নিজেকে আবারও প্রমাণ করছেন ‘কিং কোহলি’।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন