সমকালীন প্রতিবেদন : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি একে একে মানুষের কাজ কেড়ে নেবে? এই প্রশ্ন নতুন নয়। এআই গবেষণার শুরুর দিন থেকেই এমন আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে প্রযুক্তি দুনিয়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। এবার সেই আশঙ্কা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন গুগলের শীর্ষ কর্তা। তাঁর বক্তব্য, এআইয়ের দাপটে মানুষের চাকরি ও আয়ের কাঠামো আমূল বদলে যেতে চলেছে, এমনকি জনপ্রিয় ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যবস্থাও ভবিষ্যতে অস্তিত্ব হারাতে পারে।
কোভিড পর্বের পর থেকেই বাড়ি বসে অফিস করার সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বহু সংস্থাই রিমোট ওয়ার্ককে স্থায়ী বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু গুগল ডিপমাইন্ডের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান এজিআই বিজ্ঞানী শেন লেগের মতে, এই ব্যবস্থাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। তাঁর দাবি, এআই সিস্টেম ইতিমধ্যেই একাধিক ক্ষেত্রে মানুষের দক্ষতাকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভাষা ব্যবহারে, সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্য বিশ্লেষণে এআই মানুষের তুলনায় দ্রুত ও নির্ভুল হয়ে উঠছে।
শেন লেগের মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যুক্তিপ্রয়োগ, চাক্ষুষ উপলব্ধি এবং ধারাবাহিক শেখার মতো ক্ষেত্রেও এআই তার বর্তমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে। সেই প্রেক্ষিতে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “যে কাজ শুধুমাত্র কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর থেকে করা যায়, তা ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।” অর্থাৎ ঘরে বসে করা বহু অফিসভিত্তিক কাজই এআইয়ের দখলে চলে যেতে পারে।
তবে এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী নতুন নয়। এর আগেও একাধিক বিশেষজ্ঞ একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রযুক্তি বিশ্লেষক অ্যাডাম ডরের মতে, আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে বর্তমান চাকরির প্রায় সবটাই বিলুপ্ত হতে পারে। যদিও তিনি মনে করেন, পুরো চিত্রটা অন্ধকার নয়। তাঁর মতে, অন্তত তিনটি পেশা এখনও এআইয়ের নাগালের বাইরে—রাজনীতিবিদ, যৌনকর্মী এবং নীতি নির্ধারক। কারণ এই ক্ষেত্রগুলিতে মানবিক সিদ্ধান্ত, নৈতিকতা ও সামাজিক বাস্তবতার ভূমিকা এখনও এআই পূরণ করতে পারে না।
এআই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ‘এআইয়ের ঠাকুরদা’ হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টনও। তাঁর মতে, নিয়ন্ত্রণহীন উন্নতি ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তবে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুনের কণ্ঠে। তাঁদের বক্তব্য, এআই শুধু চাকরি কেড়ে নেবে না, বরং নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের পথও খুলে দেবে। যদিও সেই চাকরির রূপ ও কাঠামো বর্তমান ব্যবস্থার সঙ্গে মিলবে না।
সব মিলিয়ে, এআইয়ের প্রভাব যে কর্মক্ষেত্রে গভীর পরিবর্তন আনতে চলেছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একমত রয়েছে। সেই পরিবর্তন মানুষের পক্ষে কতটা আশীর্বাদ আর কতটা অভিশাপ হয়ে উঠবে, তা সময়ই বলে দেবে– এখন সেদিকেই নজর প্রযুক্তি দুনিয়ার।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন