Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস লিখলেন বিশ্বকাপজয়ী প্রথম বাঙালি মহিলা ক্রিকেটার রিচা ঘোষ

 

Cricketer-Richa-Ghosh

সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতের মহিলা ক্রিকেটের এক উজ্জ্বলতম অধ্যায় লিখে ফেললেন শিলিগুড়ির ২২ বছরের তরুণী রিচা ঘোষ। তিনি এখন ভারতের প্রথম বাঙালি মহিলা ক্রিকেটার, যিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলন গোস্বামী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো কিংবদন্তিরা যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন রিচা। তাঁর ব্যাটে ভর করেই ভারতের মহিলা দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি ঘরে তুলেছে।

রবিবার নভি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ফাইনালে নেমে দল যখন চাপের মুখে, তখন ৪৪ তম ওভারে ব্যাট করতে আসেন রিচা। সেখানেই তিনি খেললেন ২৪ বলে ৩৪ রানের অপরিহার্য ইনিংস। তাঁর তিনটি বিশাল ছক্কা ও দুইটি চারের ইনিংস না থাকলে হয়তো ভারতের ইনিংস সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারত না। ম্যাচ শেষে হেসে রিচা বলেন, “সবাই আমার উপর ভরসা রেখেছিল, সবাই বলছিল আমি পারব। সেই ভরসাই আমার বিশ্বাসকে দ্বিগুণ করে দিয়েছিল।”

রিচার গল্প শুরু হয়েছিল শিলিগুড়ির ছোট্ট এক মাঠ থেকে। বছর ছয়েক আগে বাংলার সিনিয়র মহিলা দলের কোচ শিবশঙ্কর প্রথমবার তাঁকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতিতে আজও ভাসে সেই মুহূর্ত— “একটা মেয়ে শিলিগুড়ি থেকে এসেছে, ক্রিজে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছয় মারছে। মহিলা ক্রিকেটে এমন দৃশ্য আমি খুব একটা দেখিনি।” সেই সময়েই তিনি বুঝেছিলেন, এই মেয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে অসাধারণ কিছু করার সম্ভাবনা।

রিচার ক্রিকেটীয় বিকাশে বড় ভূমিকা নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শৈশব থেকেই ধোনির প্রবল ভক্ত রিচা। আগে তিনি মিডিয়াম পেসার ছিলেন, সঙ্গে উইকেটকিপিংও করতেন। কিন্তু ধোনির খেলা দেখে তিনি বুঝে যান, তাঁর আসল জায়গা উইকেটকিপিং ও ব্যাটিংয়ে। ঠিক ধোনির মতোই ঠান্ডা মাথা, শেষ মুহূর্তে ম্যাচ জেতানোর মানসিকতা তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। ধোনির ভিডিও দেখে নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। আর তাই এখন অনেকেই তাঁকে ডাকছেন ‘মহিলা ধোনি’ নামে।

বাংলার ক্রিকেট কোচ শিবশঙ্কর একসময় তাঁকে ওপেনার থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে খেলতে বলেন, যাতে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাঁর পাওয়ার হিটিং কাজে আসে। রিচা তাতেই রাজি হয়ে যান। তারপর থেকেই শুরু হয় এক অন্য লড়াই, নিজেকে নিখুঁত করতে নিরন্তর অনুশীলন। কলকাতার পাটুলির একাডেমিতে ঘন্টার পর ঘন্টা প্র্যাকটিস, থ্রোয়িং মেশিনে ব্যাটিং, আর রাতে অতিরিক্ত আলো জ্বালিয়ে প্র্যাকটিস– এভাবেই গড়ে উঠেছে আজকের রিচা ঘোষ। 

বিশ্বকাপের মঞ্চে রিচা ঘোষের ইনিংস শুধু দলের জয়ের ভিত গড়েনি, বরং প্রমাণ করে দিয়েছে– বাংলার মেয়েরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শীর্ষ স্তরে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে পারে। চোদ্দো বছর পর মুম্বই শহর ফের সাক্ষী থাকল আর এক ধোনি-ভক্তের ব্যাট থেকে জন্ম নেওয়া নতুন এক গৌরবগাথার।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন