সমকালীন প্রতিবেদন : টোটো চলাচলে লাগাম টানতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। অটোর মতো এবার টোটোরও নির্দিষ্ট রুট বেঁধে দেওয়া হবে। ফলে আর ইচ্ছেমতো যাত্রী তুলে যেকোনও জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারবে না এই তিনচাকা যান। সম্প্রতি পরিবহণ দপ্তরের উদ্যোগে জেলা প্রশাসন, পুরসভা, টোটো সংগঠন এবং পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়ে স্পষ্ট গাইডলাইন জারি করা হয়েছে।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, প্রতিটি টোটোকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে হবে। দেওয়া হবে নির্দিষ্ট নম্বরপ্লেট, যাতে থাকবে কিউআর কোড। সেই কোড স্ক্যান করেই জানা যাবে কোন টোটো নির্দিষ্ট রুটে চলছে, কিংবা অন্য রুটে ঢুকে পড়ছে কি না। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে শুরু হবে টোটো শুমারি। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকায় কতগুলি টোটো চলতে পারে, তার সঠিক হিসাব রাখা হবে।
টোটো সংগঠনগুলির তরফে বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, একজনের নামে একাধিক টোটোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হোক। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘মহাজনি প্রথা’ মানা হবে না। অর্থাৎ বড়মাপের মালিকানা তৈরি করে বহু টোটো ভাড়া দিয়ে চালানোর যে অনিয়ম চলে আসছে, তা বন্ধ করার চেষ্টা হবে।
এখনও পর্যন্ত টোটো থেকে সরকারের আয় বলতে কিছু নেই। এবার সেই ব্যবস্থা বদলাতে চলেছে রাজ্য। প্রত্যেক টোটো মালিকের কাছ থেকে বার্ষিক ট্যাক্স নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সরকারের আয়ে নতুন দিশা খুলবে।
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, বর্তমানে রাস্তায় চলা টোটোগুলির অধিকাংশই বেআইনি। ভবিষ্যতে এগুলিকে ধাপে ধাপে ই-রিকশায় বদল করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তাতে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না সরকার। দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “সাধারণত টোটো দু’তিন বছরের বেশি চলে না। সেই গাড়িগুলি বদলানোর সময়ই ধীরে ধীরে ই-রিকশায় রূপান্তর করা হবে।”
যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে আগে থেকেই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল—জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টোটো, অটো বা অন্য কোনও বেআইনি তিনচাকা গাড়ি চলবে না। কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা বদলায়নি। এখনও দেদার চলছে এইসব যান, যার জেরে যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। পুলিশকে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পরিবহণ দপ্তর। ট্রাফিক কর্তাদের মতে, এসব যানবাহনের কারণে পণ্যবাহী গাড়ির গতিও শ্লথ হচ্ছে, ফলে ক্ষতি হচ্ছে পরিবহণ খাতে।
প্রশাসনের কাছে এখনও পর্যন্ত টোটোর নির্দিষ্ট সংখ্যা বা রুট সংক্রান্ত তথ্য নেই। তাই স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে টোটোর রুট নির্ধারণ করতে। কোনও এলাকায় যদি অতিরিক্ত টোটো থাকে, তবে সেগুলিকে রোটেশন করে চালাতে হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজ্য সরকার এবার টোটো চলাচলে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্দিষ্ট রুট, রেজিস্ট্রেশন, নম্বরপ্লেট, ট্যাক্স ব্যবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে নতুন নিয়ম কার্যকর হলে টোটোর জগতে আসতে চলেছে বড় পরিবর্তন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন