সমকালীন প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ রুখতে অবিলম্বে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি অর্থাৎ এনআরসি কার্যকর করার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। মঙ্গলবার বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি গ্রহণ করেছে। মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্রতীন কুমার দে ও প্রদীপ মজুমদার। এই মামলার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে আগামী শুক্রবার।
হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, এর আগে এই বিষয়ে কোনও মামলা দায়ের হয়েছে কি না। এই প্রশ্নেই মামলার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মামলাকারীদের অভিযোগ, “দেশের অন্যান্য রাজ্য ও বাংলাদেশ, মায়ানমার প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশ থেকে একাধিক অনুপ্রবেশকারী পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা এবং সমাজের স্থিতাবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” তাঁরা আরও দাবি করেছেন, এই অনুপ্রবেশের কারণে মহিলাদের নিরাপত্তা, শিশুদের সুরক্ষা এবং সামাজিক পরিকাঠামোর ভারসাম্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাই রাজ্যে অবিলম্বে এনআরসি চালু করে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত ও বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এই জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে গ্রহণের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই এনআরসি-র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী একাধিকবার সংসদ ও জনসভা থেকে বলেছেন, “বাংলায় এনআরসি হতে দেব না। সবাই নাগরিক, কাউকে তাড়ানো হবে না।” অন্যদিকে বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে ‘ভুয়ো ভোটার’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘জনঘনত্বের ভারসাম্য নষ্ট’ হওয়ার অভিযোগ তুলে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে এনআরসি চালুর দাবিতে জনস্বার্থ মামলা নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দেবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার প্রভৃতি জেলাগুলিতে বিচ্ছিন্নভাবে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। বিশেষত উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট মহকুমা, স্বরূপনগর, হেমনগর সীমান্ত অঞ্চল বা মালদা জেলার বৈষ্ণবনগর এলাকা প্রায়শই থাকে আলোচনার কেন্দ্রে।
সম্প্রতি স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত কালাঞ্চি সীমান্তে বিএসএফ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছে অনুপ্রবেশ এবং পাচার রুখতে। জানা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে সেখানে ১০ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে, যা অনুপ্রবেশের বাস্তবিক চিত্রকেই সামনে আনছে।
যেখানে সীমান্ত সুরক্ষা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন, সেখানে অনুপ্রবেশ রোধে রাজ্যের দায় কতটা– সেই প্রশ্নও বারবার উঠে এসেছে। রাজ্য বলছে, বিএসএফের কাজ সীমানা রক্ষা, কিন্তু বিরোধী দলগুলোর মতে, অনুপ্রবেশকারীরা একবার ঢুকে পড়ার পর প্রশাসনের উদাসীনতায় তারা থেকে যাচ্ছে। এখন হাইকোর্ট এই বিষয়ে কী রায় দেয়, এনআরসি বিষয়ে আদৌ কোনও প্রশাসনিক গাইডলাইন নির্ধারণ হয় কি না– সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যবাসী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন