সমকালীন প্রতিবেদন : এক জায়গায় বজায় রইলো ঐতিহ্য। অন্যদিকে সৃষ্টি হল ইতিহাস। বাংলার মানুষের কাছে দুই অতি প্রিয় দিঘা আর পুরীর দিকেই আজ নজর ছিল গোটা দেশের জগন্নাথপ্রেমীদের। নজর কাড়লো কারা ? পুরীর জগন্নাথ ধামের রথযাত্রার সঙ্গে দিঘার রথযাত্রার কোথায় মিল ? কোথায়ই বা পার্থক্য রয়ে গেল ? কি কি ছিল আজকের বিশেষত্ব ? জগন্নাথ মন্দিরে আজ যারা রথযাত্রায় সামিল হলেন তারা কি কি প্রসাদ পেলেন ? সবই থাকছে আজকের প্রতিবেদনে।
শুরুটা হোক দিঘা থেকেই। লেখা হল ইতিহাস। সেখানে প্রথম ঘুড়লো রথের চাকা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী প্রথম রথের রশিতে টান দেওয়ার পর শুরু হল দিঘায় রথযাত্রা। তবে তার আগে সমস্ত নিয়ম পালন করেন মুখ্যমন্ত্রী। যা অনেকটাই পুরীর আদলে। এদিন রথযাত্রার সময় ঠিক করা হয়েছিল দুপুর আড়াইটে। তার কিছু আগে রথের সামনে এসে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে শুভ ইঙ্গিতবাহী নারকেল ফাটিয়ে সেই জল চারিদিকে ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর সেখানে দাঁড়িয়েই চলে উপাসনা। তারপর সোনার ঝাঁড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপর একে একে ঘুরতে শুরু করে রথের চাকা। পুরীর জগন্নাথ ধামের মতোই প্রথমে এগিয়ে চলে বলভদ্রের রথ, এরপর এগোয় সুভদ্রার আর সব শেষে এগিয়ে চলে জগন্নাথ দেবের রথ। দিঘায় রথযাত্রা সূচনা করার পরই মুখ্যমন্ত্রী সেখানে হাজির ভক্তদের উদ্দেশে জানিয়ে দেন, রথের রশিতে টান দিতে কাউকে হুটোপাটি করতে হবে না। রথের সঙ্গে যুক্ত ব্যারিকেডে লাগানো রশি ছুঁলেই রথেও টান দেওয়া হবে।
এছাড়াও তিনি জানান, রথ চলবে কিছুটা থেমে থেমে। যাতে প্রত্যেকেই তা দেখতে পারেন। রথের রশিতে টান দিতে গিয়ে প্রচন্ড ভিড়ে যাতে কোনও বড় ঘটনা না ঘটে, তারজন্যই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দিঘায় ভিড় সামলানোর দায়িত্বে থাকছে কলকাতা পুলিশ।
আগামী ১ সপ্তাহ মূল মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়িতে থাকবেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। দিঘায় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ থেকে মিলবে প্রসাদও। রথে জগন্নাথ দেবের জন্য থাকছে মিষ্টি, গজা এবং ড্রাই ফ্রুটস। মাসির বাড়িতে থাকছে ৫৬ ভোগের আয়োজন। তবে রথে থাকছে না ভাত, ডাল বা খিচুড়ির মতো অন্নভোগ। দর্শনার্থীরা প্রত্যেকেই পাবেন প্রসাদ।
অন্যদিকে পুরীতেও ঐতিহ্য মেনে পথে নামলো জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথ। আজ রীতি মেনে প্রথমে রাজ পরিবারের সদস্য ছেড়াপহড়া পালন করেন। এরপর পালন করা হয় পহন্ডি উৎসব। তারপর সোনার ঝাঁড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার পরই সূচনা হয় পুরীর রথযাত্রার। প্রথমে বলভদ্র এরপর শুভদ্রা এবং সবশেষে জগন্নাথ দেবের রথের চাকা লাগানো হয়।
এরপরই শুরু হয় পুরী ধামের রথযাত্রা। আজ সেখানকার রথযাত্রায় হাজির ছিলেন শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। সমস্ত নিয়মনীতি পালনের পর এদিন মাসির বাড়ির উদ্দেশে এগিয়ে চলে ৩ ভাইবোনের রথ তালধ্বজ, দর্পদলন এবং নন্দীঘোষ। আগামী এক সপ্তাহ মাসি গুন্ডিচার বাড়িতেই থাকবেন তারা।
এবার আসা যাক এতো চর্চিত দিঘা এবং পুরীর রথযাত্রায় কোথায় কোথায় পার্থক্য রয়েছে। দিঘায় দুটি করে মোট ৬টি মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। একটি পাথরের এবং একটি কাঠের। এরমধ্যে পাথরের মূর্তিটি মূল মন্দিরেই থাকছে। আর জগন্নাথ-বলভদ্র এবং শুভদ্রার কাঠের মূর্তি রথে চড়ে যাচ্ছে মাসির বাড়ি। তাই রথযাত্রাতেও মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন ভক্তরা। পাবেন প্রসাদও।
পুরীতে সেই ব্যবস্থা থাকেনা। সেখানে কাঠের মূর্তিতেই পুজো হয়। দিঘায় রথের রশিতে টান দিতে পারবেন না ভক্তরা, তা শুধু ছুঁতে পারবেন। তবে পুরীতে সরাসরি রথের রশিতে টান দিতে পারেন ভক্তরা। তবে পার্থক্য যাই থাক। পুরী এবং দিঘায় দুটি জায়গাতেই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেছেন ভক্তরা। তবে প্রথমবার হওয়ায় বাংলার মানুষের কাছে খানিকটা বাড়তি গুরুত্ব অবশ্যই পাচ্ছে বাংলার দিঘা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন