সমকালীন প্রতিবেদন : পাঁচ বছর আগে পৃথিবী যে আতঙ্ক, মৃত্যু ও লকডাউনের সাক্ষী হয়েছিল, ফের যেন সেই স্মৃতি ফিরে আসছে। ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস, ভারতের পাশাপাশি চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে ৫,০০০-র গণ্ডি। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ওড়িশা সরকার পুরীর রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করতে চলেছে।
অন্যদিকে, চিনে ধরা পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘HKU5-CoV-2’, যা বিজ্ঞানীদের মতে ভয়াবহ অতিমারীর নতুন কারণ হতে পারে। ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৩৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫,৩৬৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ কেরলে (১৬০০+ আক্রান্ত)। দিল্লিতে আক্রান্ত ৫৯২ জন। পশ্চিমবঙ্গে নতুন সংক্রমণ ১০৬, মৃত্যু ১ জনের। রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ১২০০টি আরটি-পিসিআর টেস্ট হচ্ছে। যদিও এখনকার সক্রিয় প্রজাতিগুলি (NB.1.8.1 ও JN.1) তুলনামূলকভাবে কম মারণক্ষমতার, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন— সংক্রমণ হালকা হলেও যদি প্রতিরোধ না করা যায়, পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
এদিকে, ওড়িশা সরকার রথযাত্রায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে চলেছে। আগামী ২৭ জুন পুরীর ঐতিহাসিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ওড়িশা সরকার কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলি হল– জ্বর, সর্দি, অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষদের রথযাত্রায় অংশ না নেওয়া, অংশগ্রহণকারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, যাত্রাপথে মেডিকেল চেক পয়েন্ট এবং হেলথ ডেস্ক স্থাপন, উৎসব সরাসরি টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্যোগ। সরকার জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, করোনা নিয়ে নতুন হুমকির মুখে বিশ্ব। কারণ, চিনে মিলল করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘HKU5-CoV-2’। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে চিনে আবিষ্কৃত নতুন ভাইরাস HKU5-CoV-2। এই প্রজাতিটি মার্স ভাইরাস গোত্রের এবং এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, HKU5 ভাইরাস মানবদেহে সহজেই সংক্রমিত হয়, ভাইরাসটির প্রোটিনে সামান্য পরিবর্তন হলেই তা মানবশরীরের ACE-2 কোষে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ও উচ্চ মৃত্যু হারের সম্ভাবনা তৈরি করে।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল লেটকো জানিয়েছেন, HKU5-CoV-2 ভাইরাস নিয়ে অবিলম্বে বৈজ্ঞানিক নজরদারি প্রয়োজন। কারণ, এর মিউটেশন রোধ করা না গেলে বিশ্ব আবার অতিমারীর মুখোমুখি হতে পারে। ভারতের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহলের মতে, এখনও পর্যন্ত ভারতের করোনার সক্রিয় স্ট্রেনগুলির মারণক্ষমতা কম। কিন্তু জনগণের মধ্যে সতর্কতার অভাব এবং ভ্যাকসিনের বুস্টার না নেওয়া অস্বস্তিকর চিত্র। অতিরিক্ত জনসমাগম, উৎসব, রাজনৈতিক মিছিল ইত্যাদি দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। HKU5-CoV-2 ভারতে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি ফের ২০২০-র মতো সংকটময় হতে পারে।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বুস্টার ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক, করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হোক, উৎসব ও বড় জমায়েতে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হোক, গণপরিবহনে হাত ধোয়ার এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন