Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

নহাটা কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে বসা আলো রানী সরকারকে নিয়ে ফের বিতর্ক

 

Nahata-College

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌গোপালনগরের নহাটা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে আলো রানী সরকার নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে, তিনি বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরেও তার নামের পাশে এমএলএ লেখা রয়েছে, যা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ এবং বিরোধিতা ক্রমেই বাড়ছে।

২০২১ সালে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা ভোটে পরাজিত হওয়া আলো রানী সরকারকে শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে নহাটা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই নির্দেশিকায় তাকে বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে পরিচিত করা হয়। তবে এই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে বিতর্কিত হয়ে ওঠে, কারণ আলো রানী সরকার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পরাজিত হওয়ার পরেও তিনি কীভাবে এমএলএ পরিচয় ধারণ করতে পারেন?

কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ ওঠে। দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র রীতম বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা আমাদের প্রধানের থেকে কি শিখব? তিনি তো আমাদের মিথ্যা শেখাচ্ছেন।" কলেজের আরও এক ছাত্র সুজয় বিশ্বাস জানান, "তিনি কখনো কলেজে আসেন না। আমরা তাকে চিনতাম না, আর তার নামের পাশে এমএলএ লেখা দেখে অবাক হচ্ছি।"

বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন বিজেপির বিধায়ক স্বপন মজুমদার এই ব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, আলো রানী সরকার একজন বাংলাদেশী নাগরিক। তদন্তে এটি প্রমাণিত হয় যে, আলো রানী সরকারের নাম বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় রয়েছে। এর ফলে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসে: বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কীভাবে তিনি ভারতীয় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হতে পারেন? আবার, বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরেও তার নামের পাশে এমএলএ বা বিধায়ক কীভাবে লেখা থাকতে পারে?

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষই প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "দলকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" একইভাবে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শহর সভাপতি সৌমেন সুতার জানান, তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি ভু‌য়ো এমএলএ পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশী নাগরিককে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেন? সরকারি নথিতে এমএলএ পদে তার নামের উল্লেখ করা কেন হয়েছে? অনেকেই মনে করছেন, যদি এই অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি করবে, বিশেষত বিধানসভা নির্বাচনের আগে।

এখনো পর্যন্ত আলো রানী সরকার বা কলেজের প্রিন্সিপাল এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাননি। তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক মঞ্চেও এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ভুল পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আলোচনার বিষয় হতে পারে।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন