Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে

 ‌

Bleaching-powder-for-tank-cleaning

সমকালীন প্রতিবেদন : আপনি কি জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করছেন? নিজের এবং নিজের পরিবারের লোকজনের কত বড় বিপদ ডেকে আনছেন আন্দাজ আছে? শরীরে মারণ ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে? জল পরিশ্রুত করতেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় অনেক সময়। কিন্তু জীবাণুনাশ করতে গিয়ে, হিতে বিপরীত হচ্ছে যে! কাদের জন্য এটা বেশি রিস্কের? ব্লিচিং পাউডার খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর জন্য বিষ। এটা কি আপনি জানতেন? কি ভাবছেন? বিপদে পড়ে গেলেন? তাহলে উপায় কি? এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এক্স্যাক্টলি কি করা উচিত আপনার? প্যানিক করবেন না। প্রতিবেদনের মাঝেই লুকিয়ে আছে আপনার প্রশ্নের উত্তর। 

ব্লিচিং পাউডার আপনার পাকস্থলী ও খাদ্যনালির জন্য 'বিষ'! জলে ব্লিচিং মিশলে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। আর এর থেকে আরও যে সব রাসায়নিক তৈরি হয়, তা জটিল অসুখের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এই সব কিছু না জেনেই, আবাসনের বড় জলের ট্যাঙ্ক হোক বা বাড়ির ছোট ট্যাঙ্ক, পরিষ্কারের জন্য আপনি ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে চলেছেন। 

আসলে দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ ২০২৩ সাল থেকে ব্লিচিং পাউডারের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে গবেষণা করছে। তা নিয়ে ‘পাব মেড’ জার্নালে ‘ব্লিচ টক্সিসিটি’ নামে গবেষণামূলক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে গবেষকেরা জানিয়েছেন, জল পরিশুদ্ধ করতে বা জীবাণুনাশের কাজে ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগ এত বেশি হচ্ছে, যা ক্যানসার, লিভারে বিষক্রিয়া, শ্বাসনালিতে সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠছে। তাহলে আন্দাজ করতে পারছেন তো পরিস্থিতি ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছে? 

বুঝতে হবে ব্লিচিং জীবাণুনাশ করলেও তা শরীরের জন্য বিপজ্জনক। কারণ এতে আছে ৩ থেকে ৮ শতাংশ ক্যালশিয়াম হাইপোক্লোরাইট। তাছাড়া থাকে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড। ফলে ব্লিচিং পাউডার যদি অন্য কোনও জীবাণুনাশক তরল বা ভিনিগারের সঙ্গে মেশে, তা হলে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করবে। যা ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ধ্বংস করলেও যদি জলের সঙ্গে মানুষের শরীরে ঢোকে, তা হলে প্রথমে শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করবে। এর থেকে চোখ, নাক ও ফুসফুসে বিষক্রিয়া শুরু হবে। মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হবে। হাঁপানি বা সিওপিডির রোগী হলে তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে। 

ব্লিচিং মিশ্রিত জল খেলে, পাকস্থলীতে প্রদাহ শুরু হবে। দীর্ঘ সময় ধরে পেটে গেলে আলসার হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য যা বিপজ্জনক। হার্টের রোগ, কিডনির অসুখ বা কোনওরকম কোমর্বিডিটি থাকলে তা প্রাণসংশয়ের কারণও হয়ে উঠতে পারে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ব্লিচিং এমন এক রাসায়নিক যা জলের সংস্পর্শে এলে আরও কিছু ডিবিপি তৈরি করে, যেগুলোর অধিকাংশই ক্যানসারের জন্য দায়ী। তাই জলে অতিরিক্ত ব্লিচিং মিশলে, তা থেকে রক্তের ক্যানসারও হতে পারে। এমনকি ব্লিচিং থেকে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।

তাহলে উপায় কি? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধাতব বা প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করলে, তা ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করে। প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম কণা মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে মিশলে তা আরও বিপজ্জনক। সেক্ষেত্রে যদি ব্লিচিং ব্যবহার করতেই হয়, তা হলে জলে সামান্য পরিমাণে মেশাতে হবে। তবে এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, সেই জলে অ্যামোনিয়া বা অন্য কোনও রাসায়নিক কিন্তু মেশানো যাবে না। ব্লিচিং মিশ্রিত জল দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার পরে, অন্তত বার চারেক তা পরিষ্কার জলে ধুতে হবে। এর পর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে আবারও জল ফেলে দিয়ে তার পর পরিষ্কার জল ভরতে হবে। কোনওভাবেই যেন রাসায়নিকের একটি কণাও পরিষ্কার জলে না মেশে। 

আর একটা কাজ করতে পারেন। ব্লিচিং পাউডারের বিকল্প হিসেবে ইউভি ডিজইনফেকশন বা ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা হাইড্রোজেন পারক্সাইড, বেকিং সোডা, ভিনিগার ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা গরম জলে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে তা দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করলে আর বিষক্রিয়ার ভয় থাকে না। তাহলে আর কি? পরবর্তী সময় থেকে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার না করে এই বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করেও দেখতে পারেন।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন