সমকালীন প্রতিবেদন : অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার যে এখনও ভারতের অন্যতম বড় চোরাচালান চক্র, তারই বড় প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার রাতে। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনগাঁর ঢাকাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে বন দফতরের আধিকারিকরা উদ্ধার করলেন বিপুল পরিমাণ বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ। কচ্ছপ পাচারের এই ঘটনা শুধু পরিবেশের ভারসাম্যের জন্যই নয়, দেশের নিরাপত্তার দিক থেকেও বড় আশঙ্কার বার্তা দিচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত বনগাঁর ঢাকাপাড়ায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বন দফতরের একটি দল হানা দেয় স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নিতাই কুণ্ডুর বাড়িতে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি জীবিত ও মৃত কচ্ছপ। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে নিতাই কুণ্ডুর স্ত্রীসহ ভিন রাজ্যের ৬ জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জেরায় জানা যায়, শুধুমাত্র ঢাকাপাড়া নয়, বনগাঁর সুভাষনগরের আরেকটি বাড়িতেও কচ্ছপ মজুত রাখা হয়েছে।
পরবর্তী অভিযানে সুভাষনগরের বাড়ি থেকেও উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ কচ্ছপ। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কুইন্টাল ওজনের কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি জীবিত এবং ৮টি মৃত। ধৃতদের মধ্যে ৩ জন নাবালক রয়েছে। তাদের বারাসতের জুভেনাইল আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২ জন ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। এই দুজন সহ নিতাই কুন্ডুর স্ত্রীকে বুধবার বনগাঁ আদালতে তোলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কচ্ছপ পাচারের মূল কারণগুলো হল– চীনা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে উচ্চ চাহিদা, প্রাচীন ওষুধ ও তাবিজ তৈরির কাজে ব্যবহার, জীবন্ত পোষ্য হিসেবে বিক্রি, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় আচারের জন্য। এই পাচারের মূল কেন্দ্রগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম– এই অঞ্চলগুলি থেকে কচ্ছপ পাচার হয়ে পৌঁছায় বাংলাদেশ, নেপাল ও চীন পর্যন্ত।
ভারতের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ অনুসারে, এই ধরনের সংরক্ষিত প্রাণীর পাচার একটি অপরাধযোগ্য অপরাধ। দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি হতে পারে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত জেল ও মোটা অঙ্কের জরিমানা। বন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং পাচারচক্রের গোটা নেটওয়ার্ক ভাঙতে তদন্ত চলছে।
এই ধরনের চোরাচালান শুধু আইন ভাঙে না, প্রকৃতির উপর আঘাত হানে। কচ্ছপ প্রাকৃতিক পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষা, মৃত জৈব পদার্থ ভক্ষণ ইত্যাদি। এদের হারিয়ে গেলে পুরো ইকোসিস্টেম বিপন্ন হয়ে উঠবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন