সমকালীন প্রতিবেদন : বুধবার রাতের পর থেকেই বঙ্গোপসাগরের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সমুদ্রে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে এবং ঘণ্টায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে উত্তরদিকে, অর্থাৎ স্থলভাগের দিকে এগোতে থাকে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানায়, এই গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই গভীর নিম্নচাপটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির কাছ দিয়ে অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা মোটামুটি শুকনো থাকলেও, বিকেল গড়াতেই বৃষ্টির দেখা মেলে। রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে তখন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আবহাওয়ার এই রূপান্তরই জানান দিচ্ছিল যে বড় ধরনের এক পরিবর্তন আসন্ন।
যখন গোটা রাজ্যের নজর ছিল বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ঘিরে সম্ভাব্য দুর্যোগের দিকে, তখন কিছুটা চুপিসাড়েই রাজ্যে প্রবেশ করে বর্ষা। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে আবহাওয়া দপ্তর। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির রেকর্ড বলছে, গত পাঁচ বছরে এত আগে বাংলায় বর্ষা আসেনি।
সাধারণত ১ জুন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বলে সরকারি হিসাব। তবে এ বছর ২৪ মে-তেই কেরালায় বর্ষা ঢুকে পড়ে, সময়ের অনেক আগেই। এরই আরেকটি শাখা পূর্বে অগ্রসর হয়ে উত্তর–পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যেও বর্ষা নিয়ে এসেছে কিছুদিন আগে। বাংলার প্রতীক্ষার অবসান ঘটল বৃহস্পতিবার।
আলিপুর হাওয়া অফিসের মতে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া অতি গভীর নিম্নচাপটি স্থলভাগে প্রবেশ করার পর থেকেই স্বাভাবিক নিয়মে তার শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করবে। কারণ, সমুদ্রে জলীয় বাষ্পের অব্যাহত জোগান থাকলেও স্থলভাগে তা থাকে না, ফলে কোনও ওয়েদার সিস্টেমই স্থলভাগে টিকতে পারে না বেশি শক্তিশালী অবস্থায়।
তবে শক্তি হারালেও এই নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির আবহ বজায় থাকবে শনিবার পর্যন্ত। এর ফলে শুক্রবার ও শনিবার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি অঞ্চলে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির আবহ বজায় থাকবে রবিবার পর্যন্ত। আজ, শুক্রবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহবিদরা জানিয়েছেন। শনিবারও ওই অঞ্চলগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত আবহাওয়ার এই রূপ বজায় থাকবে।
নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্র ও শনি—এই দু’দিন সমুদ্র থাকবে অতি উত্তাল। সেই কারণে মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সতর্কতা মানা অত্যন্ত জরুরি বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন