সমকালীন প্রতিবেদন : চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড, আর গোদের উপর বিষফোঁড়া ডেঙ্গি। বাংলার এক্স্যাক্ট পরিস্থিতি কি? কিভাবে রোধ করবেন করোনা? কিভাবে নেবেন প্রিকশন? ডেঙ্গি থেকে বাঁচার উপায়টাই বা কি? সরকারি তরফে যা যা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, সেসব মানছেন তো? কমবে রিস্ক, তবে দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু সাবধানতা মাস্ট। বাকি বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।
প্রথমেই কোভিডের কথা। গোটা দেশ, এমনকি এ রাজ্যে যত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ততই প্যালপিটিশন বাড়ছে সাধারণ মানুষের। কলকাতা থেকে জেলা, সব জায়গার এক ছবি। এই অবস্থায় করোনা মোকাবেলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুরসভা। সেগুলো জানাবো, তার আগে বলবো এবারের কোভিড পজিটিভের উপসর্গ। এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা সাঙ্ঘাতিক?
এই মুহূর্তে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রনের একাধিক সাব ভ্যারিয়েন্ট। নতুন করে হাই অ্যালার্টে চলে গেছে হাসপাতালগুলো। RT-PCR টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে যে যে উপসর্গগুলো দেখলে সাবধান হবেন এবং পরীক্ষা করাবেন সেগুলো হল; জ্বর, সর্দি, গলা জ্বালা, মাথা যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, নাক বন্ধ, অতিরিক্ত ক্লান্তি, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা এবং গ্যাস অম্বলের সমস্যা।
উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই সাবধানতা অবলম্বন করে নিজেকে আইসোলেট করুন। তারপর চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। তাছাড়া, উপসর্গ দেখা না দিলেও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরুন। বাইরে থেকে ফিরে হাত-পা ধুয়ে নিন খুব ভালো করে। অবশ্যই পোশাক বদলে ফেলুন। খাওয়াদাওয়ার আগে ব্যবহার করুন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর অবশ্যই নজর রাখুন সরকারি তরফ বা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আপডেটে।
কেউ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে কিনা, সেই তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের সতর্ক করেছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। এমনকি সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এই নিয়ে তিনি মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও কিন্তু অভয় দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, এখন যে করোনা ছড়াচ্ছে, তা মারাত্মক নয়। ফলে এখনই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। তবে সাবধানতা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, বর্ষা এলেই ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া বৃদ্ধি পায়। তা প্রতিরোধেও কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন অতীন ঘোষ। অলরেডি পরিছন্নতায় জোর দিচ্ছে পুরসভা। তাছাড়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর প্রাক বর্ষার বৃষ্টিকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাজে লাগাতে চায় পুরসভা। তাই জল জমছে, এমন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই সব এলাকায় ভরা বর্ষায় যাতে জল না জমে, তার জন্য নিকাশি বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, ওই সব এলাকায় মশার আঁতুড়ঘর চিহ্নিত করে তা নষ্ট করার কাজ শুরু করা হবে। কোথাও জঞ্জাল জমে থাকলে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকে তা দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ওই সব এলাকায় বাড়ির মধ্যে জল জমে রয়েছে কি না, সেই জলে ডেঙ্গির জীবাণুবাহি মশার লার্ভা রয়েছে কি না, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা সেই খোঁজে নামবেন। কিন্তু এর সাথে সাথে বর্ষায় খাওয়া দাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।
আজকের এই প্রতিবেদনে থাকবে এমন পাঁচটা খাবারের হদিস, যা খেলে ডেঙ্গির ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। খেতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। স্ট্রবেরি, কিউয়ি, বেল পেপার, লেবু, আঙুরে এই ভিটামিন রয়েছে। এই ভিটামিন রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা জোগানোর পাশাপাশি প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করে। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুনও খেতে পারেন। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরা এই আনাজের অনেক গুণ রয়েছে। খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াই করার পাশাপাশি কিছু ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত অসুখ যেমন ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি প্রতিরোধে রসুন খুব উপকারী।
পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন খেতে হবে। মাছ, মাংস, সয়াবিন, মুসুর ডাল, ডিম এ সব থেকে পাওয়া পুষ্টিগুণ শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত করবে। বর্ষার মরসুমে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতিদিন খাবারের পাতে রাখুন তেতো। নিমপাতা, উচ্ছের মতো খাবার বেশি করে খান। যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। রান্নায় লবঙ্গ ও দারচিনি বেশি করে ব্যবহার করুন। এই সব মশলার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এই মশলা দিয়ে চা করেও খেতে পারেন। কাঁচা হলুদও কিন্তু দারুন কার্যকরী।
আর এই সব কিছুর পরেও সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। জ্বর হলে ফেলে না রাখাই ভাল। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে জ্বর, মাথাব্যথা সহ শরীর জুড়ে ব্যথার প্রবণতা থাকে। ডেঙ্গিও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ডেঙ্গির ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অনেক বেশি সক্রিয় হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন