Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস

 ‌

Coronavirus-increasing-panic

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যেই ‌দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, হংকং সহ একাধিক দেশে আচমকাই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার আবারও বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। তাতে এশিয়াবাসীর একাংশের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। করোনা আক্রান্তের ঘটনা বাড়তে থাকায় সতর্ক গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতও। দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

সম্প্রতি হংকংয়ে কোভিড ভাইরাসের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের সেন্টার ফর হেলথ প্রোটেকশনের কমিউনিকেবল ডিজিজ-এর মুখ্য অধিকর্তা অ্যালবার্ট আউ। তিনি বলেন, সম্প্রতি এই ভাইরাসের প্রভাব হংকংয়ে বেশ বেড়ে গিয়েছে। এই কেসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশ বেশি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে রেসপিরেটরি নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে এবং আচমকা কোভিড পজিটিভিটিও বেড়েছে।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং JN.1-এর সাবভ্যারিয়েন্ট LF.7 এবং NB.1.8-এর দাপটের কারণেই এই সংক্রমণ বৃদ্ধি ঘটছে। JN.1 হল ওমিক্রন BA.2.86-এর সাবভ্যারিয়েন্ট। ২০২৩ সালের আগস্টে প্রথমবার এর দেখা মিলেছিল। পাশাপাশি দাবি করা হচ্ছে, টিকা থেকে সুরক্ষা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরাও এমনটাই মনে করছেন। বিশেষ করে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে সংক্রমিত হওয়ার। পাশাপাশি মরশুমি সংক্রমণ, সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ- এগুলিও সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

হংকংয়ের সরকারি সূত্রে খবর, হঠাৎ করেই বেশ কিছু কোভিড কেসে আক্রান্তের অবস্থা অবনতি হতে দেখা গিয়েছে, যা বেশ উদ্বেগের। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই ৩১ জনের নমুনায় করোনা ভাইরাস মিলেছিল। গত দু’বছরে করোনা আক্রান্তের এমন হার দেখা যায়নি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে নতুন করে বাড়ছে চিন্তা। কোভিডের সংক্রমণ গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী হতেই সতর্ক নাগরিকদের একাংশ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে হংকংয়ের জনপ্রিয় গায়ক ইয়াসন চ্যান তাঁর তাইওয়ানের কোয়াসশিংয়ে কনসার্ট বাতিল করেছেন।

এশিয়ার দুই বৃহত্তম ইকোনমিক জোন হংকং এবং সিঙ্গাপুরে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত হলেও অন্যান্য দেশে এখনও সেরকম কোনও চিত্র নজরে আসেনি। কো-মর্বিডিটি রয়েছে এমন মানুষদের যদিও ভ্যাকসিনের বুস্টার শট নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এই দুই দেশের সরকার। অন্যদিকে, চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুসারে, চিনেও গত বছরের মতোই ফের বাড়ছে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার হার। তবে কোথাওই এখনও আতঙ্কের মতো পরিস্থিতি হয়নি। তবে সিঙ্গাপুর, হংকংয়ে গোটা বিশ্ব থেকেই প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন, আর সেক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতের পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মে পর্যন্ত দেশে মোট ২৫৭ জন কোভিড আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ১২ মে সংখ্যাটা ছিল ১৬৪ জন। গত ১২ তারিখ কোভিডে একজনের মৃত্যুর খবরও নথিভুক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চিন থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মারণ করোনা ভাইরাস। যার কবলে পড়ে গোটা বিশ্বে ৭০ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অতিমারীর সেই ভয়ংকর দিন যেন আর না ফেরে সেটাই গোটা বিশ্বের প্রার্থনা। এই পরিস্থিতিতে ফের ভয় বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস।

এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, ভারতে কোভিড পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রশাসনিক ও চিকিৎসা মহল স্তরে সম্প্রতি হওয়া বৈঠকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের দাবি, এক সূত্র জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে। এখনও পর্যন্ত দেশে যে ২৫৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ লক্ষ করা গিয়েছে, তাঁদের সকলের ক্ষেত্রেই সংক্রমণ অত্যন্ত মৃদু। এই ধরনের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক কম।

এই পরিস্থিতিতে ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস-এর চেয়ারপার্সন বিশেষ বৈঠক ডাকেন। যাতে সামিল হয়েছিলেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল-এর বিশেষজ্ঞরা, জরুরি মেডিক্যাল বিভাগ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছিল। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান করোনা আক্রান্তের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সমস্যা তেমন গুরুতর নয় বলে জানা গিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কেরালা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি কোভিড রোগীর খোঁজ মিলেছে। ৬৯ জন কেরালাবাসী করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে গত ১২ মে। এছাড়া, তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। এছাড়াও তামিলনাড়ুতে ৩৪, কর্নাটকে ৮, গুজরাট ৬ এবং দিল্লিতে তিন জন করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছে। অন্যদিকে, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং সিকিমে ১ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত একজন করে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।


















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন