সমকালীন প্রতিবেদন : ভূসর্গ জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁও এ মঙ্গলবার ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটল। আর এই ঘটনায় প্রাণ হারালেন ২৬ জন পর্যটক। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও অনেকে। সেনা হেলিকপ্টারে আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পহেলগাঁওয়ের রাস্তার ধারের সবুজ জমি বৈসারণে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় জঙ্গিরা।
জানা গেছে, এদিন দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসারণ উপত্যকায় হঠাৎই গুলির শব্দ শোনা যায়। পাহাড়ি এই অঞ্চলে শুধু হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছনো যায়। হামলার সময়ে জঙ্গিরা ক্যামোফ্লেজ পোশাকে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই-তিনজন জঙ্গি বৈসারণে পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
পহেলগাঁওয়ের বৈসারণ, যেখানে কেবল পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়, এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং পর্যটন মরশুমে ফি বছর এখানে প্রচুর ভিড় থাকে। এদিনের জঙ্গি হামলার ঘটনার পরপরই, সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সাথে একটি পুলিশের দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পর্যটকদের সরিয়ে নিতে এবং হামলার পিছনে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি অভিযান শুরু করে।
পহেলগাঁওয়ের শান্তিপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এমন ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। জঙ্গিদের খোঁজে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি আতঙ্কের উপত্যকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। এবছর পর্যটকদের উপর এটিই প্রথম জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা শেষবার পর্যটকদের উপর আক্রমণ করেছিল গত বছরের মে মাসে। সেই সময় ২ পর্যটক আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনাটিও পহেলগাঁওয়েই ঘটেছিল।
এদিনের জঙ্গি হামলার ঘটনার পরেই জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লিতে তাঁর বাসভবনে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান তপন ডেকা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন, সিআরপিএফ প্রধান জ্ঞানেন্দ্র প্রতাপ সিং, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি নলিন প্রভাত সহ সেনার শীর্ষ আধিকারিকরা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন অনেকেই।
ওই হামলায় বেঁচে ফেরা এক মহিলার দুর্দশার ছবি ধরা পড়েছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। তিনি বলছেন, 'আমরা ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ জঙ্গিরা এসে বলল, তোমার স্বামী মুসলিম নয়। তারপরই গুলি করে দিল।' বিভীষিকার কথা জানিয়েছেন, আর এক প্রত্যক্ষদর্শীও। তাঁর স্বামীকে নৃশংসভাবে গুলি করে মেরেছে জঙ্গিরা। ওই মহিলা জানিয়েছেন, 'আমি জঙ্গিদের বলেছিলাম, আমাকেও মেরে ফেল। ওরা বলল তোমাকে মারব না। মোদিকে গিয়ে বলো কী হচ্ছে এখানে।'
এই হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও কঠোর হবে।' তিনি অমিত শাহকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা একে ‘অমানবিক ও ঘৃণ্য’ কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই হামলাকারীরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কোনও শব্দেই এদের নিন্দা যথেষ্ট নয়।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন