দেবাশীষ গোস্বামী : প্রায় নিঃশব্দে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় হয়ে গেল একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গত ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশোবন্ত চন্দ্রচূড় ভারতীয় বিচারব্যবস্থা লেডি জাস্টিসের নতুন মূর্তি উন্মোচন করেন।
আগে যে মূর্তিটি ছিল, তার চোখ দুটো বাধা ছিল এবং এক হাতে দাঁড়িপাল্লা অন্য হাতে তরবারি ছিল। এটা পুরাতন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার শাসন ব্যবস্থার ধ্বজা বহন করে আসছিল। লেডি জাস্টিস হল বিচার ব্যবস্থায় নৈতিক শক্তির রূপক রূপ।
লেডি জাস্টিস প্রাচীন রোমান শিল্পের ন্যায় মূর্তি থেকে উদ্ভূত হয়, যা জাস্টিটিয়া নামে পরিচিত, যিনি গ্রিক দেবী থেমিসের সমতুল্য। আগে যে চোখ বাধা ও অপর হাতে তরোয়াল নিয়ে যে লেডিস জাস্টিসের মূর্তিটা ছিল, তার কারণ হলো, ন্যায়বিচার নিরপেক্ষ এবং একজন ব্যক্তির চেহারা বা অন্যান্য বাইরের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়।
লেডি জাস্টিস আদালতের সিদ্ধান্তের নিরপেক্ষতা প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দাঁড়িপাল্লা ধারণ করে এবং ন্যায় বিচারের শক্তির প্রতীক হিসেবে একটি তলোয়ার হাতে নিয়ে আছে। পরিবর্তিত নতুন মূর্তিতে দেখা যাচ্ছে দুধ সাদা গাউনের পরিবর্তে পরনে কুচি আঁচলের নকশাপাড়ের শাড়ি। গলায় হার, কানে দুল ,হাতে বালা এবং মাথায় মুকুট। যে সাজ ভারতীয় নারীরা ধারণ করে।
বাঁ হাতে একই রকমের দাঁড়িপাল্লা থাকলেও ডান হাতে তরবারির পরিবর্তে এসেছে সংবিধান। এই নতুন চোখ খোলা লেডি জাস্টিসের মূর্তির কারণ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আইন এখন আর অন্ধ নয়। আইন চোখ মেলে দেখবে আর সবাইকে সমানভাবে দেখবে এবং বিচার হবে সম্পূর্ণ ভারতীয় সংবিধান মেনে। সেই জন্য হাতে তরবারির পরিবর্তে সংবিধান রাখা হয়েছে।
তবে পরিবর্তন যাই হোক সাধারণ মানুষের মনে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে কি এতদিন ভারতীয় বিচারব্যবস্থা অন্ধ ছিল? আর বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, এই পরিবর্তনের মূলে বিজেপি–আরএসএস-এর ছক পরিষ্কার। এই মূর্তিটি বিশেষভাবে হিন্দুত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন