সমকালীন প্রতিবেদন : এ যেন এক অন্য স্বাধীনতার আহ্বান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে যেভাবে ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে উত্তাল হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ, বুধবার রাতে সেই দৃশ্যই মনে করিয়ে দিল। কলকাতা থেকে কোচবিহার, বনগাঁ থেকে বোলপুর সর্বত্রই একই চিত্র।
দিন কয়েক আগেই কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর যে পাশবিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, তারই প্রতিবাদে এখন গোটা রাজ্যে তথা গোটা দেশে, এমনকি বিদেশেও গর্জে উঠেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা। আর এই গর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন মহিলারাই।
কাজের প্রয়োজনে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকেও রাতবিরেতে পথে বের হতে হয়। আর সেক্ষেত্রে শুধু রাস্তায় নয়, কর্মস্থলেই যদি একজন মহিলাকে দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়, ধর্ষিত হতে হয়, খুন হতে হয়, তাহলে তার থেকে আর লজ্জার কিছু নেই। আর এই লজ্জা, এই নিন্দার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন সাধারণ মানুষ। আর তাই পথে নেমে প্রতিবাদ করা ছাড়া উপায় নেই।
পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করতে যেভাবে দেশের মানুষ আত্ম বলিদান দিয়েছিলেন, গর্জে উঠেছিলেন, আজ সেভাবেই নারী স্বাধীনতার জন্য উদ্বেলিত হলো গোটা রাজ্য, গোটা দেশ। তার থেকে বাদ গেল না সীমান্ত শহর বনগাঁও। সোশ্যাল মিডিয়ায় আহ্বান করা একটি প্রতিবাদী কন্ঠের শরিক হয়েছিলেন বনগাঁর আপামর নারীরা।
আরজিকর হাসপাতালের বর্বরোচিত ঘটনার বিচারের দাবিতে 'মেয়েরা, রাত দখল করো' স্লোগানকে সামনে রেখে স্বাধীনতার মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার জন্য পথে নামার যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তা যেন জনজোয়ারে পরিণত হলো। শুধু কলকাতা নয়, সীমান্ত শহর বনগাঁতেও বুধবার গভীর রাতে একই চিত্র ধরা পরল।
এদিন রাতে বনগাঁর নীলদর্পণের সামনে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বনগাঁ শহর এবং আশপাশ অঞ্চলের বিভিন্ন বয়সের বহু নারী, সঙ্গে পুরুষেরাও এই জমায়েতে শামিল হয়েছিলেন। খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপরে বসে পড়েই চলেছে প্রতিবাদ। কোনরকম রাজনৈতিক রং নয়, শুধুমাত্র বিবেকের টানে, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একত্রিত হয়েছিলেন তাঁরা।
এই প্রতিবাদী রাতের সাক্ষী নারীদের প্রত্যেকের গলায় একই দাবি, আর জি কর হাসপাতালের নারকীয় কান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি কাজের প্রয়োজনে মহিলাদের রাতবিরেতে পথে, কর্মস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
এদিন সম্মিলিত কন্ঠে মুহুর্মুহু আওয়াজ ওঠে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। রাতের নীরবতা, অন্ধকারকে খান খান করে দিয়ে সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে শহরের আকাশে, বাতাসে। প্রায় সারা রাত ধরেই এই প্রতিবাদ, এই দাবিতে সোচ্চার হন বনগাঁর নারী-পুরুষ সহ আপামার জনসাধারণ। তাঁদের আশা, এরপরে নিশ্চয়ই আরও সক্রিয় হবে প্রশাসন, সতর্ক হবে দুর্বৃত্তরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন