সমকালীন প্রতিবেদন : উত্তরাখণ্ডের মুসৌরির কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত কুখ্যাত মুলিঙ্গার ম্যানশন। গরমকালে সময় কাটানোর জন্য একসময় আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা ফ্রেডেরিক ইয়ং যে ম্যানশন তৈরি করিয়েছিলেন, তা আজ প্যারানরমাল বিভিন্ন ঘটনার শীতল গল্পে আবৃত।
১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় এই ম্যানশনটি। এই বিস্তীর্ণ এস্টেটটি বেশ কয়েকটি এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে, যা স্থানীয়দের এবং পর্যটকদের একইভাবে চমকে দিয়েছে। তবে এই ম্যানশনের আগে ফ্রেডেরিক ইয়ং সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
মুসৌরির স্বনামধন্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফ্রেডেরিক। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য মাত্র ১৪ বছর বয়সেই আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ভারতের মুসৌরিতে চলে আসেন ফ্রেডেরিক। পরে ১৮২৫ সাল নাগাদ মুসৌরির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তিনি।
মুসৌরিকে তিনি এতটাই ভালোবেসে ফেলেছিলেন যে, পাকাপাকিভাবে ওখানে বসবাস করার জন্যই তিনি তৈরি করান মুলিঙ্গার ম্যানশন। আসলে বাড়ি বললে ভুল হবে, একে একপ্রকার প্রাসাদ বলা যেতে পারে। বাড়ির বাইরে এত বড় জায়গা ছিল যে, সেখানে রীতিমতো ঘোড়দৌড়ের প্র্যাকটিস করতেন ফ্রেডেরিক।
তবে বেশিদিন লাগেনি এই ম্যানশন ঘিরে রহস্যজনক ঘটনা শুরু হতে। ১৮৪৫ সালে একটি ট্র্যাজেডি ঘটে, যখন প্রাসাদের তৎকালীন মালিক লর্ড আবেরনাথি রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা যান। কেউ কেউ এটা সাধারণ মৃত্যু অনুমান করলেও, অন্যরা তার মৃত্যুকে এই বাড়িতে লুকিয়ে থাকা নৃশংস শক্তিকে দায়ী করে।
১৯২০ র দশক আসতে আসতে অভিশপ্ত প্রাসাদটি বেশ কয়েকটি হাত বদল হয়। আর প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে দুর্ভাগ্যবশত মৃত্যু বা পাগলামিতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এখানে। স্থানীয় মানুষেরা এক অভিশপ্ত রক্তরেখার কথা বলেন।
তাদের মতে, যারাই মুলিঙ্গার ম্যানশনের মালিকানা দাবি করার সাহস করেম, তাদেরকে এই অভিশপ্ত বাড়ির দুর্ভাগ্য ক্ষমা করে না। ১৯৬৭ সাল নাগাদ প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটররা ভুতুড়ে গল্পগুলির মাধ্যমে আকর্ষিত হন। অলৌকিক ঘটনার তদন্তকারীরা উত্তরের সন্ধানে মুসৌরিতে ছুটে আসেন।
কিন্তু ঘটনাগুলির পিছনে উত্তর খুঁজে পাওয়ার বদলে বরং প্রতিটি অভিযানে কেবলমাত্র আরও প্রশ্ন উঠে এসেছে। কারণ, প্রতিটি অভিযানে যে পরিমাণ ভয়ঙ্কর EVP রেকর্ডিং এবং বিভিন্ন রকম ভুতুড়ে আবির্ভাব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তার দ্বারা সমস্ত যৌক্তিক ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করতে হয়।
বর্তমান দিনে স্থানীয় বাসিন্দারা এর ভুতুড়ে অস্তিত্বকে বর্জন করার চেষ্টা করলেও, মুলিঙ্গার ম্যানশন অলৌকিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল হিসাবেই রয়ে গিয়েছে।
মুসৌরির পাহাড়ে গোধূলি নেমে আসার সাথে সাথে, মুলিঙ্গার ম্যানশন অতিপ্রাকৃতের স্থায়ী লোভের প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেন এর ভয়ানক শীতল সত্য উন্মোচন করার জন্য যথেষ্ট সাহসী যারা, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এই অভিশপ্ত মুলিঙ্গার ম্যানশন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন