Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩

‌‌অযত্নে, অবহেলায় পরে রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র

The-tourist-center-is-neglected

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এমন একটি স্থান, যাকে কিনা মিনি ইন্ডিয়া বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ গোটা ভারতবর্ষে যা পাওয়া যায়, একা পশ্চিমবঙ্গেও তার বেশিরভাগই দেখতে পাওয়া যায়। পর্যটনের জন্য সমুদ্র থেকে পাহাড় বা জঙ্গল সবই আছে আমাদের এই রাজ্যে। 

তেমনি, এই রাজ্যের অত্যন্ত বিখ্যাত একটি পর্যটন স্থান হলো ডুয়ার্স। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান ডুয়ার্সের দিকে। তবে সেই ডুয়ার্স এরিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চামুর্চী ইকোপার্ক ও রিসোর্ট, কেবলই সরকারি উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে একপ্রকার হারিয়ে যেতে বসেছে পর্যটন মানচিত্র থেকে।

ডুয়ার্সের ভারত-ভুটান সীমান্তের খুবই কাছে সুখরেতি ও খানাভর্তী নামক দুটি নদীর মাঝখানে অবস্থিত থাকা চামুর্চী ইকোপার্ক ও রিসোর্ট এর বেহাল অবস্থার কারণে একপ্রকার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ডুয়ার্সে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। চামুর্চী বাজার থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ইকোপার্ক। একদিকে ভুটানের পাহাড় এবং অন্যদিকে নদী, ঘন জঙ্গল– সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক দৃশ্যের হাতছানি। তবে বর্তমানে পার্কের এতই বেহাল দশা যে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কের চারিদিক ভরে উঠেছে আগাছা এবং জঙ্গলে। সেই সঙ্গে পার্কের ভেতরকার বসার জায়গা, ল্যাম্পপোস্ট ও সোলার লাইটগুলি ভেঙ্গে পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

২০১৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এই পার্কটির উদ্বোধন করেন। সেই সময় পাহাড়ের একদম কাছে এবং দুইটি নদীর একদম সামনেই হিমেল পরিবেশে তৈরি হওয়া এই রিসোর্টটি বেশ আকৃষ্ট করেছিল সমস্ত পর্যটকদের। তবে কিছুদিন পরেই ধুপগুড়ি ব্লক ভাগের পর চামুর্চী পার্ক পরিচালনা এবং তার দায়িত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। ধুপগুড়ি ব্লক ভাগ হওয়ার আগে তার অধীনে থাকা, 'কালীন' বা বর্তমানে যার নাম 'বানারহাট ব্লক' তার অধীনের এই ইকোপার্কটি ধুপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির দ্বারাই দেখভাল করার টেন্ডার দেওয়া হয়।

বর্তমানে বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির অভিযোগ, ধুপগুড়ি ব্লক ভাগ হওয়ায় চামুর্চী পার্ক পরিচালনা এবং দায়িত্ব নিয়ে তৈরি হওয়ার টেন্ডারের কারণই পার্কের উন্নয়নমূলক কাজ ও দেখভালে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, বানারহাট এখন আলাদা একটি ব্লক হলেও বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতি নাকি এখনও পর্যন্ত পার্কের কোনো দায়িত্ব পায়নি।

আর বর্তমানে এই দুই ব্লকের ভেতরকার সমস্যার কারণে অবহেলায় পড়ে থাকা চামুর্চী ইকোপার্ক একপ্রকার জঙ্গলে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন যে, মাথাপিছু প্রায় ২০ টাকা দিয়ে এই পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। তবে সপরিবারে গিয়ে ২০ টাকা করে প্রত্যেকের পেছনে খরচ করে এই জরাজীর্ণ পার্ক ঘুরতে আসার কোনও মানে হয় না।

চামুর্চি এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে আজ এত সুন্দর এই পার্কটির বেহাল অবস্থা। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর আবেদন, পার্কটিকে যদি আবারও ভালোভাবে মেরামত করে, নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়, তাহলে আবার এখানে আগের মতোই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হবে। সেইসঙ্গে সীমান্ত লাগোয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোটাও ভালো হবে।

কেবলমাত্র স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও চাইছেন, এত সুন্দর পরিবেশের মধ্যে এমন একটি পর্যটনকেন্দ্র যেন কোনওমতেই নষ্ট না হয়ে যায়। ইকো পার্কটির আসল সমস্যা এর টেন্ডার নিয়ে। যদিও ধুপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, বর্তমানে এই পার্কের টেন্ডার যাদের কাছে আছে, তাদের মেয়াদ খুব তাড়াতাড়ি উত্তীর্ণ হতে চলেছে। তারপরেই বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতি এর নতুন টেন্ডারটি পেয়ে যাবে।

এদিকে পার্কের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা রায়ের সাফাই, ১০০ দিনের কাজে পার্কের সমস্ত আগাছা এবং জঞ্জাল পরিষ্কার করানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় পার্ক আবারও আগাছায় ভরে উঠেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজটি করে দেওয়া হবে।

যদিও পার্কের এই বেহাল দশা সম্পর্কে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহর। তার সাফ কথা, পার্কের দায়িত্ব যার কাছে আছে, তাকেই দেখভাল করার দায়িত্ব নিতে হবে। ঠিক এভাবেই এক ব্লক আর এক ব্লককে এবং এক মন্ত্রী আর এক মন্ত্রীকে দোষ দিয়েই এড়িয়ে যাচ্ছেন তাদের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের টানাপোড়নেই পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ডুয়ার্সের এক অপরূপ সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র চামুর্চী ইকোপার্ক ও রিসোর্ট।






‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন