Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩

গাছ রোপন করে নবজাতক কন্যাসন্তানকে সম্মান জানায় এই গ্রাম

 

Honoring-the-newborn-baby-girl

সম্পদ দে : প্রতিটি মেয়ের জন্ম যেন এক উৎসব। কন্যা সন্তান জন্মালে একপ্রকার উৎসব পালিত হয়। এমনও গ্রাম রয়েছে এই ভারতে। কেন্দ্রীয় সরকারের 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' এমন একটি প্রকল্প, যার দ্বারা সমাজে কন্যা সন্তানের গুরুত্বকে বোঝানো হয়। বোঝানো হয় এখনকার যুগে, কন্যা সন্তানদেরকেও শিক্ষার আলোয় আনা কতটা প্রয়োজন। এই ২১ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে, মেয়েরাও কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই ছেলেদের থেকে।

তবে এর পরেও দেশের বিভিন্ন কোনায় যখন দেখতে পাওয়া যায়, আসিফা, প্রিয়াঙ্কা, নির্ভয়ার মতো একাধিক নারীদের ওপর অত্যাচারের সংবাদ, তখন মাথা নিচু হয়ে যায় দেশের প্রতিটি মানুষের। তবে এটাই যে কেবলমাত্র গোটা দেশের পরিস্থিতি নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে আমাদেরই দেশের রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত গ্রাম পিপলন্ত্রী।

বর্তমানে দেশের চারিদিকেই নারী নির্যাতন এবং কন্যা ভ্রূণ্য নষ্ট করার সম্পর্কে সচেতনতা যথেষ্ট বাড়লেও, এমন একটা সময়, যখন গোটা দেশ জুড়েই বেড়ে চলছিল কন্যা ভ্রূণ্য নষ্ট করা এবং নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধ। সেই সময় থেকেই রাজস্থানের এই ছোট্ট গ্রামটি নজির গড়ে আসছে উন্নত মানসিকতার। বর্তমান জীবনে সমাজের ভারসাম্য বজি‌য়ে রাখার জন্য পরিবেশে গাছ এবং নারীর প্রয়োজন যে কতটা, তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। 

আর সেই প্রয়োজনকেই যথেষ্ট ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল মরু রাজ্য রাজস্থানের দক্ষিণভাগে অবস্থিত এই জেলা। সমাজে কন্যা সন্তানদের গুরুত্ব কতটা কেবলমাত্র সেই সম্পর্কেই নয়, মরু রাজ্য হওয়ায় গাছের গুরুত্বও যথেষ্ট ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন গ্রামের সকলে। 

গত প্রায় ১৫ বছর ধরেই এই কাজ করে চলেছেন তারা। গ্রামে জন্মানো প্রতিটা কন্যাসন্তান পিছু ১১১ টি করে গাছের চারা রোপন করা বাধ্যতামূলক এইখানে। তবে শুধু এখানেই শেষ নয়, রোপন করা প্রতিটি গাছ যেন সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে এবং বেঁচে থাকে, সেই দায়িত্বও নিতে হয় পরিবারকে।

এই গ্রামের পরিবারগুলিতে জন্মানো প্রতিটি কন্যাসন্তান পিছু লাগানো গাছগুলিকেও বাড়ির মেয়ের মতোই যত্ন করে রাখা হয়। রোপন করা হয়ে থাকে আম, কাঁঠাল, নিম, আমলার মতো একাধিক গাছ। এমনকি গত ছয় বছরেই গ্রামের লোকেরা মিলে প্রায় এক কোটির থেকেও বেশি গাছ রোপন করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই।

তবে কেবল গাছের চারা রোপনেই থেমে থাকেননি গ্রামবাসীরা। কোনও একটি কন্যাসন্তানের জন্মের পরপরই গোটা গ্রামবাসীরা মিলে প্রায় ২১ হাজার টাকা মতো জোগাড় করেন নিজেরা। এছাড়া, আরও ১০ হাজার টাকা নেন সেই পরিবারের থেকে। তারপর গোটা টাকাটা সেই কন্যাসন্তানের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া হয় একটি ব্যাংকে। 

মেয়েটির বয়স ২০ বছর না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকা খরচ করা যাবে না কোনওভাবেই। আর এইভাবেই সেই সদ্য জন্মানো কন্যা সন্তানটির একটি সুন্দর ভবিষ্যৎকেও সুনিশ্চিত করে রাখা হয় এখানে। তবে ভাবনার বিষয় হলো যে, যেখানে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন বড় বড় শহরেও এইরকম ভাবনা চিন্তা দেখা যায় না, সেখানে রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এইরকম উন্নত মানসিকতার শুরুটা কোথা থেকে।

রাজস্থানের এই গ্রাম পিপলন্ত্রীতে সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে এসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, এই উদ্যোগটিকে প্রথম শুরু করেন গ্রামেরই প্রাক্তন প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়ালের। শ্যামসুন্দরজির কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তাঁর মেয়ে কিরণের স্মরণে এই উদ্যোগটি শুরু করার ক্ষেত্রে তিনি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাঁর মেয়ে কিরণ হঠাৎ করেই ডিহাইড্রেশনের কারণে মারা যায়। মেয়ের এই অকাল মৃত্যুর কারণে মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন তিনি। তবে তারপরেই তিনি ভেবে নেন, গ্রামের আর কোনও মেয়ে যেন এইভাবে অসুস্থ না হয়। সুস্থ থাকে এবং নিজেদের জীবনে এগিয়ে যেতে পারে। আর তার সেই ভাবনা থেকেই তিনি প্রথম এই উদ্যোগ নেন।

বর্তমানে এই গ্রামে প্রতি বছর প্রায় গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। গোটা গ্রামবাসী একপ্রকার উৎসবে মেতে ওঠেন এই সময়গুলিতে। তারা যেন গোটা দেশ এবং বিশ্বকে মিষ্টিমুখেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সমাজে মেয়েদের স্থানটি পুরুষের সমানই উঁচু। একটি পরিবারে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম কোনও উৎসবের থেকে কম কিছু নয়।




‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন