Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২

শারদীয়া দুর্গাপুজো কেন অকালবোধন

Why-is-Sharadiya-Durga-Puja-premature?

শারদীয়া দুর্গাপুজো কেন অকালবোধন 

পীযূষ হালদার‌

     "শৃণু রাজন্ প্রবক্ষ্যামি নবরাত্র-ব্রতং শুভম্। 

       শরৎকালে বিশেষেণ কর্তব্যং বিধিপূর্বকম্।"... 

দেবীভগবতে বলা বলা হয়েছে– 'শরৎকালে নবরাত্রি ব্রত বিশেষ রূপে যথাবিধি মেনে করতে হয়। বসন্তকালেও অনুষ্ঠান যথাযথ রীতি মেনে করা উচিত। শরৎ ও বসন্ত নামক ঋতুদয় প্রাণীগনের পক্ষে অতি দুঃখে অতিবাহিত হয়। বসন্ত ও শরৎ এই দুই ঋতুই অতি ভয়ঙ্কর। এই সময়ে মানবগণ বিবিধ পীড়ায় পীড়িত হয়। অতএব চৈত্র ও আশ্বিন এই দুই শুভ মাসে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ভক্তি করে দেবী চণ্ডিকার পুজো করবেন।' ‌

বাংলায় বাসন্তী পুজো হলেও মৃন্ময়ী প্রতিমায় দুর্গাপুজো বহুকাল থেকে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। আশ্বিন আর চৈত্র মাসের শুক্লা সপ্তমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত বাংলায় দু'রকম পুজোয় দশভূজা প্রতিমার পুজো হয়। আশ্বিন মাসের পুজোকে বলা হয় শারদীয়া দুর্গাপূজা। চৈত্র মাসের পুজো বাসন্তী পুজো নামে খ্যাত। 

ভারতের অন্যপ্রান্তে ওই সময়ে একনিষ্ঠভাবে নবরাত্রি উৎসব উদযাপিত হয়। শারদীয়া নবরাত্রি উৎসবের অন্তিম দিনে শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কা বিজয় সম্পন্ন হয়। তারপর দশমী তিথিতে শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কা বিজয় ও রাবণ বধের স্মরণে বিজয় উৎসব দশেরা অনুষ্ঠিত হয়। 

বস্তুত শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত দক্ষিণায়ন কাল। এই সময় দেবতাদের রাত্রি। মাঘ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত উত্তরায়ন কাল, দেবতাদের দিন। এই সময়কালে দেবতারা জাগ্রত থাকেন। জাগ্রতকালে দেবতাদের পুনর্জাগরণের প্রয়োজন হয় না। বাসন্তী পুজোয় দেবীর বোধন থাকে না। শরৎ ঋতু দেবতাদের নিদ্রাকাল বলে শরৎকালের দুর্গাপুজোয় দেবীর জাগরণের জন্য বোধন পুজো হয়। 

সে কারণেই শাস্ত্রে শারদীয়া দুর্গাপুজো 'অকালবোধন' নামে পরিচিত। শরৎ ঋতুতে দেবী দুর্গার পুজোর অনেকগুলি কারণ আছে। শরৎকালে দেবীর পুজো সম্বন্ধে কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, মহিষাসুর বধের জন্য দেবগন কর্তৃক আরাধিত হয়ে দেবী কাত্যায়নীর আশ্রমের দশভূজা রূপে আবির্ভূত হন। 

দেবীপুরাণেও বলা হয়েছে, দেবী শরতকালের আশ্বিনের মহানবমীতে ঘোড়াসুরকে বধ করেছিলেন। দেবীভগবতে সতীর দেহত্যাগের পর আশ্বিনের শুক্লা অষ্টমীতে ভদ্রাকালী রূপে দেবী আবির্ভূত হয়ে দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করেন। 

ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য অকালে অর্থাৎ দেবতাদের রাত্রিকালে দেবীর পুজো করেন। কালিকা পুরাণের বলা হয়েছে এই সময়ে ব্রহ্মা দেবীর বোধন করেছিলেন। 

এসব কারণেই শরৎকালের শারদীয়া দূর্গা পুজোকে অকালবোধন বলা হয়। শ্রীরামচন্দ্র দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল শারদীয়া দুর্গাপুজো। সেইজন্যই শারদীয়া দুর্গাপুজো অকালে হলেও তার প্রাধান্য পেয়েছে বাংলায়। তাই এই পুজো অকালবোধন বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে শরৎ ঋতুকে কখনই দেবিপুজোর ক্ষেত্রে 'অকাল' বলা যায় না। 

মার্কণ্ডেয়চণ্ডীতে শরৎকালে যে দুর্গা পুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে, সেখানে শরৎকালকেই দেবীর পুজোর যথার্থ কাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। শরৎকালে প্রকৃতির সর্বত্র আদ্যাশক্তির বিশেষ প্রকাশ লক্ষিত হয়। বাহ্যপ্রকৃতির এইরূপ অভিব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অন্তর প্রকৃতিতেও এক আনন্দের প্রকাশ দেখা যায়। 

সেই জন্যেই মানুষ দেবীকে আহ্বান করেছেন আগমনী সংগীতের মূর্ছনায়– 'জগতের আনন্দযজ্ঞে সবারে করি আহ্বান।' ‌এই শরৎকালেই এখনও পর্যন্ত বাংলার ঘরে ঘরে, অলিতে গলিতে, মাঠে প্রান্তরে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচদিনের দুর্গোৎসব। 

মানব সভ্যতার এবং কৃষ্টির মেলবন্ধনের এক অপরূপ মিলন উৎসব এই দুর্গাপূজা। প্রকৃতি শরৎকালে সেজে ওঠে। বর্ষার পর সবুজের সমারোহে, উজ্জ্বল সূর্য কিরণে ভরে থাকে ধরিত্রী। তৃণে তৃণে শিশিরবিন্দু হীরক দ্যুতি, বাতাসে শিউলির ঘ্রাণ আর শ্বেতশুভ্র কাশের দোলায় প্রকৃতিও দেবীর আরাধনায় মত্ত হয়ে ওঠে। 

ঋণী–  শারদীয়া 'উদ্বোধন' পত্রিকা। 





 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন