Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

আমাদের রাজ্যের শিক্ষা আজ কোথায়!

 ‌

Education-in-our-state

আমাদের রাজ্যের শিক্ষা আজ কোথায়!            

অজয় মজুমদার 

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাটা আজ দৈনতায় দাঁড় করানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির পরে অফলাইন পরীক্ষা চললেও হোম সেন্টার। মাধ্যমিক অন্য সেন্টারে হলেও, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হোম সেন্টারে কেন করা হলো ? কোন উদ্দেশ্যে করা  হলো ? এই বিষয়ে কিছুই জানা যায় না৷ শিক্ষকেরা স্কুলের পরীক্ষায় অন্তত ঘরে থেকে কাগজ দেওয়া বা অন্য দেখভালের কাজ করতেন৷ তাঁদের দেখেও পরীক্ষার্থীরা সংযত হতো। 

আজ কিন্তু স্বাধীন শিক্ষার যুগে একশ্রেণীর পরীক্ষার্থী বই দেখে উত্তর লেখার রেওয়াজ তৈরি করে ফেলেছে৷ মূল্যায়নের সময়ও পরীক্ষককে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে বলা হয়৷ ফলে মেধা তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান পাচ্ছে দুশো জন। দ্বিতীয় স্থান পাচ্ছে ৬ জন, তৃতীয় ৫০ জন। এইরকমভাবে উচ্চ মেধার কোনও আইডেন্টিটি নেই৷ গুড় ও চিনির দর সমান। 

এরপর কলেজে একবার প্রবেশ করা মানেই অসুস্থ রাজনৈতির কবলে পড়া। আর কলেজে শিক্ষাটা তো প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কলেজ শিক্ষাটা চলছে সম্পূর্ণ পার্ট-টাইম এবং স্থায়ী কন্ট্রাকচুয়াল শিক্ষকদের হাতে। একজন স্থায়ী শিক্ষক কোনওরকমে আছেন। এই হচ্ছে কলেজ শিক্ষার অবস্থা। প্রাকটিক্যাল ক্লাস হয় না বললেই চলে। আর প্রাকটিক্যাল পরীক্ষাটাতো ছেলে ভোলানোর মতো। সেখানে আবার গতানুগতিক কিছু বিষয় পড়ানো হয়। যার সঙ্গে কর্মজগতের আকাশ-জমিন ফারাক৷ তাহলে কোন শিক্ষা চলছে আমাদের রাজ্যে ?

আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বিহার, উড়িষ্যার শিক্ষা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। বিহারে নাকি কোনও পরীক্ষাই হয় না৷ ৮০–৯০% নম্বর পায়। সে গল্প আজ রাজ্যের ঘরে প্রবেশ করেছে। একসময় আমাদের রাজ্যে বিহার, উড়িষ্যা এবং উত্তরপ্রদেশের লোক শ্রমিকের কাজে আসতেন৷ আজ তা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। কারণ, আমাদের রাজ্যের অনেক শ্রমিক এখন মহারাষ্ট্র, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিচরণ করছেন৷ 

এখন আর ভিন রাজয় থেকে শ্রমিকের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। সেইসব রাজ্য থেকে এখন অনেকেই আইএএস পর্যন্ত হচ্ছেন। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাও তৈরি হয়েছে তাদের রাজ্যে। আমাদের রাজ্যে কর্ম সেক্টর তৈরি না করে, ভুঁইফোড়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে কি হবে? তাও আবার বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুনাফাই যাদের শেষ কথা।

এক হাসপাতাল নার্সিং সুপারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বাইরে থেকে পাস করা বিএসসি নার্সিং কিংবা জেএনএম নার্সিং কিছু শিখে আসে না। তাদের শেখানোও কঠিন হয়ে পড়ে। সেইজন্য এইচডিইউ, আইসিইউ, ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট এ ডিউটি দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ কারণ, তারা এইসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার শেখেনি। কিছু না শিখিয়ে কোনওমতে একটা ডিগ্রী ঝুলিয়ে দেওয়াই হলো তাদের কাজ। 

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যোগ্য শিক্ষক সংগ্রহ করা কঠিন। কারণ, এরা সবসময় মুনাফার কথা মাথায় রাখে৷ একবার এক বিএড কলেজের কর্ণধার কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলেছিলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল করতে গিয়েছিলাম। আমাকে পরামর্শ দেওয়া হলো এসব দরকার নেই৷ বিএড কলেজ খুলুন, সঙ্গে ডিএলএড রাখুন। ২ বছরে আপনার টাকা উঠে আসবে। 

আর স্কুল আইসিএসসি বা সিবিএসসি অনুমোদন পাওয়া কঠিন। সব পরিকাঠামো না থাকলে ওরা অনুমোদন দিতে চায় না। তাই যাদের কাছে টাকার থলি আছে, তারা এখন বিএড কলেজের সঙ্গে ডিএলএড কলেজ খুলে বসে পড়লেন৷ এর মধ্যে ব্যবসার মুনাফা যাতে বেশি আসে, সেইজন্যে বি.এড দু'বছর করা হলো৷ সেটা অবশ্য শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। 

শিক্ষক নেই বহু কোর্সেই৷ সারা পশ্চিমবঙ্গ ধরে চলছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইক্রোবায়োলজি, মলিকুলার বায়োলজি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স প্রকৃতি। এই কোর্সগুলির কোনও চাকরির ব্যবস্থা আমাদের রাজ্যে একেবারেই নেই। অন্য রাজ্যে ছুটতে হবে। সেখানে শিক্ষাটা পরিপূর্ণ না হলে কাজ পাওয়া কঠিন হয়। তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে, একবার ভাবুন৷‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন