Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২

‌দেশভাগ, স্বাধীনতা ও বনগ্রাম মহকুমা (‌দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব)‌

Bongaon-sub-division-2

 ‌দেশভাগ, স্বাধীনতা ও বনগ্রাম মহকুমা(‌দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব)‌ 

  রবীন্দ্রনাথ তরফদার


মহকুমা গঠিত হওয়ার অব্যবহিত পরে ১৮৬৪ সালে বনগ্রাম শহরে একটি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিবিশিষ্ট বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। গড়ে ওঠে থানা এবং আদালত। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ব্যসায়-বাণিজ্যের ও সরকারি কাজের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে শহর বনগ্রাম। ১৮৮২ সালে জেলা পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়ায় বনগ্রাম মহকুমাকে নদীয়া জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে যশোর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বনগ্রাম মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় ১৮৮৬ সালে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। 

১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। লর্ড মাউন্টব্যাটেন- এর কাল্পনিক বিভাজন অনুযায়ী বনগ্রাম মহকুমা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৫ অগাস্ট দেশজুড়ে স্বাধীনতা উৎসবে বনগ্রামের অধিবাসীবৃন্দ স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন। এই উৎসব পালিত হয় বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে।

ব্রিটিশ আইনজীবী John Radcliffe  দেশভাগের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সুবিশাল কাজ সমাধা করার জন্য দায়সারাভাবে তাঁকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিভাজিত মানচিত্র ১৯৪৭ সালের ১৭ অগাস্ট ঘোষিত হয়। 

Radcliffe সাহেবের রোয়েদাদ মতে বনগ্রাম মহকুমার চারটি থানার মধ্যে বনগ্রাম ও গাইঘাটা থানা দুটি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। বনগ্রাম মহকুমাকে ২৪ পরগণা জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৮ অগাস্ট তারিখে বনগ্রাম মহকুমা আদালতের ব্যবহারজীবীগণ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আদালত চত্বরে ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। 

২৬ অগাস্ট তারিখে আরও একবার ভারতের স্বাধীনতা উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবও পালিত হয় বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। মন্ত্রী কালীপদ মুখোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন। তুষারকান্তি ঘোষ  অশোকচক্র অঙ্কিত ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম মহকুমা শাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নৃপেন্দ্রমোহন চক্রবর্তী।

প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য বিশালায়তন ২৪ পরগণা জেলাকে ১৯৮৬ সালের ১ মার্চ তারিখে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা নামক দুটি জেলায় বিভক্ত করা হয়। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় বনগ্রাম। জেলা সদর শহর হয় বারাসত। অতি সম্প্রতি (১ অগাস্ট, সোমবার, ২০২২) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে আরও সাতটি জেলা ঘোষণা করেছেন, যেগুলি ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে বলা হয়েছে। 

ঘোষিত জেলাগুলির মধ্যে একটি হল 'ইছামতি', যার অন্তর্ভুক্ত হবে বনগ্রাম ও বাগদহ সন্নিহিত অঞ্চল। উল্লেখ্য, বাগদহ ইতোমধ্যেই পুলিশ মহকুমায় পরিণত হলেও এটি বনগ্রাম মহকুমার একটি ব্লক। নতুন এই জেলা কার্যকরী হলে জেলার সদর শহর বনগ্রাম হলেও বনগ্রামের বহুকালের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা লুপ্ত হবে।

বারবার জেলা বদল হলেও মহকুমা হিসাবে বনগ্রামের অস্তিত্ব কখনই বিপন্ন হয়নি। মহকুমা গঠনের আগেও ইছামতি নদী, খাল-বিল-বাঁওড়-জলাভূমি-অরণ্য সব মিলিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী বনগ্রামের যে অখন্ডতা, ইছামতি তার অন্যতম এবং অপরিহার্য একটি খন্ডিত রূপ। অবশ্যই তা রূপকথার মতো এই মহকুমার জনজীবনের প্রাণরেখা।

অতীতের খরস্রোতা ইছামতি আজ বিপন্ন। ২১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদী আজ বিপন্ন মৃতপ্রায়। কোথাও জলশূন্য, কোথাও নদীর উপর দিয়েই রাস্তা, কোথাও সরু খালের মতো ক্ষীণকায়া, আবার কোথাও কচুরীপানায় আবৃত। দূষিত জল স্নান-পানের অনুপযুক্ত। নৌপরিবহন, জোয়ার-ভাঁটা, জলজ প্রাণী এখন স্মৃতিকথা। মহকুমার জীবনজীবিকার উপর পড়েছে অপরিসীম প্রভাব। বর্ষণে বন্যা অনিবার্য।

তাই ইছামতির চাই সার্বিক সংস্কার। গতিহীন ইছামতির নামে জেলা যেন ইছামতিকেই পরিহাস! ইছামতি গতি ফিরে পাক আর জেলা যদি করতেই হয় তার নাম হোক বহু ইতিহাসের সাক্ষী 'বনগ্রাম', এমনই দাবি উঠেছে। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন