শম্পা গুপ্ত : পুলিশ লাইনের ভেতরেই ছেলেকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হলেন আত্মসমর্পণকারী প্রাক্তন মাওবাদী। সরকারি প্যাকেজে তিনি বর্তমানে রাজ্য পুলিশে হোমগার্ডের চাকরিতে যুক্ত ছিলেন। ঘটনার সময় স্ত্রী কোনওরকমে পালিয়ে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। সোমবার সকালে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটে পুরুলিয়া জেলার বেলগুমা পুলিশ লাইনে। আত্নঘাতী প্রাক্তন মাওবাদীর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বছর ৪০ বয়সের আত্মঘাতী প্রাক্তন ওই মাওবাদীর নাম হেমন্ত হেমব্রম। স্ত্রীর নাম চম্পা হেমব্রম। তাদের ৬ বছরের ছেলের নাম অবশ্য এখনও জানা যায় নি। তাদের আসল বাড়ি পুরুলিয়া জেলা আড়ষা থানার তানাসি গ্রামে। বছর কয়েক আগে তারা দুজনেই মাওবাদী দলে নাম লেখায়। পরবর্তীতে হেমন্ত এবং চম্পা মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়ার্ডের সদস্য হয়। আর হেমন্তকে অযোধ্যা স্কোয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮–০৯ সাল নাগাদ হেমন্ত এবং চম্পা তৎকালীন বাম সরকারের কাছে ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রচুর খুন এবং বোমা বিষ্ফোরণের মামলা দায়ের হয়।
রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হবার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষনা করেন। আর সেই প্যাকেজে আগ্রহী হয়ে ২০১৩ সালে বন্দুক সহ পুলিশের কাছে আত্ম সমর্পণ করে হেমন্ত এবং তার স্ত্রী চম্পা। পরবর্তীতে হেমন্তকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়। তারপর থেকে বেলগুমা পুলিশ লাইনে স্ত্রীকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন হেমন্ত। বছর ছয়েক আগে তাদের একটি পুত্র সন্তানও হয়।
এদিকে, সোমবার সকালে হঠাৎই বেলগুমা পুলিশ লাইনের কোয়ার্টার থেকে হেমন্ত এবং তার ৬ বছরের ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরে পুলিশ চম্পাকে আটক করে। তার কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে, সন্তানকে কেন্দ্র করে প্রায়দিনই তাদের স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধতো। রবিবার রাতে এবং সোমবার সকালেও বিবাদ বাধে। আর তখনই একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেমন্ত প্রথমে ছেলেকে খুন করে। তারপর নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। চম্পাকে খুনে চেষ্টা করা হলেও বিপদ বুঝে তিনি পালিয়ে বাঁচেন। এই ঘটনায় পুলিশ লাইনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন