Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রোহিঙ্গারা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৪)‌

 রোহিঙ্গারা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৪)‌

  অজয় মজুমদার


বাংলাদেশ রোহিঙ্গা জনসংখ্যা নিয়ে চিন্তিত ৷ একে তো নিজের দেশের জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার হিমশিম খাচ্ছে, তার ওপর শরণার্থীর ঢল ৷ কক্সবাজারের পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবায় প্রধান পিন্টু ভট্টাচার্য বলেছেন, 'জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনও সচেতনতাই নেই রোহিঙ্গাদের ৷ এমনিতেই গোটা সম্প্রদায়টা অতীতের সব কিছু ফেলে এসেছে। নিজেদের দেশেও তারা নাগরিক অধিকার পায়নি ৷ অনেক পরিষেবা থেকেই তারা বঞ্চিত থেকেছে ৷ শিক্ষা ব্যবস্থার হাল খুব খারাপ। ফলে 'জন্মনিয়ন্ত্রণ'‌ সম্পর্কে অধিকাংশ রোহিঙ্গা পরিবারের কোনও ধারণা নেই ৷ পিন্টু বলেছেন, এমনও বাবা–মা রয়েছেন যাদের ১৯ টি সন্তান। বহু পুরুষের একাধিক স্ত্রী। প্রশাসন থেকে কন্ডোম বিতরন করা হয়েছে। কিন্ত তারাই জনোচ্ছে, আদৌ ওগুলি ব্যবহার করা হয় কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে ৷

জন্মনিয়ন্ত্রণ ইসলাম বিরোধী ৷ রোহিঙ্গাদের বক্তব্য,পরিবার বড়ো না হলে বিদেশে বেঁচে থাকা কঠিন ৷ নিত্য দিনের খাবার ও পানীয় জল জোগাড় করাই এক রকম যুদ্ধের শামিল ৷ সেইজন্য জনসংখ্যা বাড়াবার প্রয়োজন বলে রোহিঙ্গারা মনে করে ৷ রোহিঙ্গারা যাতে নিজের ঘরে ফিরতে না পারে, তারজন্য বার্মার সামরিক বাহিনী তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। স্যাটেলাইট থেকে দেখা গেছে, রাখাইন অঞ্চল দাউদাউ করে জ্বলছে ৷ তাদের ফেলে আসা সম্বলটুকুও নিষ্ঠুরের দল পুড়িয়ে দিচ্ছে ৷ অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে মহিলাদের অবস্থা খুবই করুন ৷ 

রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে আসা চিকিৎসকদের বয়ান থেকে জানা যায়, মহিলাদের শরীরে যে ধরনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে, তা থেকে চিকিৎসকরা নিশ্চিত, ওই মহিলারা ভয়ংকর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ আবার গণধর্ষণের সম্মুখীনও হয়েছেন ৷ মায়ানমার সরকার এই সব অভিযোগ এককথায় উড়িয়ে দিয়েছে। তারা পাল্টা আক্রমণ করে বলেছে, রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠী সেনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে ৷ সেনা মায়ানমার নাগরিকদের সুরক্ষার কাজ করছে। সরকারের পরামর্শদাতা ও সরকার প্রধান আউং সাস সু-চি-র মুখপাত্র জিও হিতায়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত করা হবে। তবে সূ-চি সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেননি ৷

কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে আটজন স্বাস্থ্য কর্মীর সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের চিকিৎসক দল জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছেন, এবছর ৩০ আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন ধর্ষিতার  শুশ্রূষা করেছেন। লোডা নামে একটি শিবিরের ডাক্তাররা চিকিৎসা করতে গিয়ে তাদের পরীক্ষায় উঠে এসেছে, একশোর বেশি মহিলার উপর যৌন নিগ্রহের চিত্র। এই শিবিরে আবার ধর্ষিতার সংখ্যাও কম নয় ৷ তবে যে ধরনের অত্যাচার হয়েছে, সেটা কিন্তু মর্মান্তিক ৷ কুড়ি বছরের এক তরুনী দাবি করেছেন, তাকে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে  বন্দুকের বাট দিয়ে পিটিয়ে মায়ানমারের সেনা ধর্ষণ করে। খবরের সূত্র– এন এইচ সি, এইচ সি আর রিপোর্ট। 

এইসব অবস্থার কথা জেনেও রোহিঙ্গারা বিপদসংকুল নৌকাযোগে সমুদ্রযাত্রায় পাড়ি দিতে  বাধ্য হচ্ছে ৷ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহ যেমন তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে গিয়ে আশ্রয় নিতে গেলে ২০১৫ সালে তাদের জল পথে বাধা সৃষ্টি করে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে ৷ সেই সমালোচনা সামাল দেওয়ার জন্য এক রকম বাধ্য হয়েই ওই দেশগুলি সমাধানের পথ বের করতে বৈঠকে বসে ৷‌.....(‌চলবে)‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন