সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতীয় সময় বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিট। ইতিহাস লিখতে নির্ধারিত এই সময়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। গন্তব্য—আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। সেই মহাকাশযানে ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল-সহ আরও তিন নভশ্চর। রওনা দেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মহাকাশ থেকে প্রথম বার্তা পাঠালেন শুভাংশু। জানালেন, 'অসাধারণ সফর! তেরঙা কাঁধে নিয়ে আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।'
শুভাংশুদের এই অভিযানের নাম ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’। ১৪ দিনের এই মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাসার প্রাক্তন নভশ্চর রেগি হুইটসন। দলের বাকি সদস্যরা হলেন—পোল্যান্ডের স্লায়োস উজনানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। তাঁদের মহাকাশযান এখন পৃথিবী থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উপরে, প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।
মিশনের সূচনা হয় আমেরিকার ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে, স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে। সেখান থেকেই শুভাংশু জানান, '৪১ বছর পর ভারত ফের মহাকাশে পা রাখল। এই অভিযানই গগনযানের ভিত্তি তৈরি করবে। আমি চাই, এই যাত্রায় প্রতিটি ভারতীয় অন্তর থেকে শামিল হোক।'
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, 'শুভাংশু শুক্ল প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখতে চলেছেন। ১৪০ কোটির স্বপ্ন তাঁর কাঁধে।' ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর এত বছর ধরে কোনও ভারতীয় নভশ্চর মহাকাশে যাননি। তাই শুভাংশুর যাত্রা এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন।
১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর লখনউয়ের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শুভাংশুর। বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা একজন সরকারি কর্মী, মা আশা একজন গৃহবধূ। ছোট থেকেই শুভাংশু স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছোঁয়ার। স্কুলজীবনে পড়াশোনা, প্রজেক্ট, ক্রীড়া—সব ক্ষেত্রেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে যান। পরে এনডিএ-তে উত্তীর্ণ হন প্রথম চেষ্টাতেই।
২০০৫ সালে স্নাতক পর্ বশেষ করে বিটেক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বেছে নেন ফাইটার পাইলটের জীবন। ২০০৬ সালে যোগ দেন ভারতীয় বায়ুসেনায়। এক বছরের মধ্যেই চালাতে শুরু করেন Su-30 MKI, MiG-21, MiG-29, Jaguar-সহ একাধিক যুদ্ধবিমান। তাঁর আকাশযাত্রা ছাড়িয়েছে ২০০০ ঘণ্টারও বেশি।
২০১৯ সালে ইসরোর গগনযান মিশনের জন্য বাছা হয় তাঁকে। প্রশিক্ষণ নেন রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে। এরপর ‘Axiom Mission 4’-এ নির্বাচিত হন পাইলট হিসেবে। মহাকাশযান চালনার দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। এই অভিযানের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে কঠোর প্রশিক্ষণ। সংক্রমণ ঠেকাতে এক মাসের নিভৃতবাসেও ছিলেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তাঁরা অন্তত ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন।
এই অভিযান নিয়ে শুভাংশুর বাবার বক্তব্য, 'ছেলের জন্য গোটা দেশ প্রার্থনা করছে। ওর স্বপ্ন আমাদেরও স্বপ্ন হয়ে উঠেছে।' মায়ের প্রতিক্রিয়া, 'ও তো আমার বাচ্চা, চিন্তা হয়… কিন্তু গর্বও হয়।' স্ত্রী ড. কামনা শুভা একজন দন্ত চিকিৎসক। তাঁদের ছোট ছেলে কিয়াস আজ বাবার পথ চেয়ে আকাশে তাকিয়ে। শুধু শুভাংশু নয়, আজ গোটা দেশই আকাশ ছুঁল। তাঁর উড়ান যেন ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নপূরণের উড়ান।










কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন