Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

সন্তান পালনে বাবা–মায়ের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিৎ?‌ রইল বিশেষজ্ঞদের একগুচ্ছ পরামর্শ

 ‌

Raising-children

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌সাবধান! খুব সতর্কতার সঙ্গে করুন সন্তান পালন। বাবা–মায়েদের জন্য থাকছে বিশেষজ্ঞদের একগুচ্ছ পরামর্শ। ভাবাতে হবে! জেনারেশন আলফার সময় শুরু। পান থেকে চুন খসলেই বিপত্তি! তাই সন্তানকে বড় করে তুলতে বুঝে শুনে পা ফেলুন। দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানো কোনো কাজের কথা নয়। সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মাকে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে হয়। এই প্রতিবেদনে আলোচিত ৯ টি পয়েন্টে সহজ হতে পারে আপনার সঙ্গে আপনার সন্তানের সফর।

ছোটরা এখন অনেক বেশি স্মার্ট। তারা প্রশ্ন করে। তাদের জেদ বেশি। তাই সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে বড় করে তুলতে হলে শুধু শাসনে কাজ হবে না। কটু শব্দ, চিৎকার বা সন্তানের গায়ে হাত তোলা কাজের কথা নয়। আপনার একটা ভুল গোটা পরিস্থিতিকে বিগড়ে দিতে পারে। তাই শাসন করুন, কিন্তু পদ্ধতি মেনে। শাসনে বরং উৎসাহের প্রবেশ ঘটান। মিশুন বন্ধুর মতো। ছোটরা কিন্তু যা দেখে, সেটাই শেখে। তাই আগে– 

ক) হিংসার ব্যবহার কমান। চর, থাপ্পড়, মারধরে সন্তান সায়মিকভাবে সোজা পথে থাকতে পারে। কিন্তু এই ধরনের উগ্র ব্যবহার তার মনের উপরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবর্তে আলোচনা করুন। কথা বলুন। সেখান থেকেই সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে বের করুন। 

খ) পথপ্রদর্শকের ভূমিকা ঠিক হওয়া দরকার। সন্তান কোনও ভুল করলে তাকে বার বার দোষের জন্য হুমকি দেবেন না। অনেক সময়ে বকা বা হুমকির মতো ঘটনা ছোটদের আত্মসম্মানে আঘাত করতে পারে। যেটা অনেক বাবা মা'ই ভাবেন না। এবার ভাবুন। অভিভাবকেরা তাদের প্রথপ্রদর্শক হয়ে উঠুন। শিশুরা যদি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করে, সেই পরিবেশে তারা বাধ্য আচরণ করে, এটা কিন্তু বাবা মায়ের মাথায় রাখা দরকার। 

গ) মনে রাখবেন, বাচ্চার প্রতিপালনে বাবা–মা ছাড়াও দাদু–ঠাকুমার মতো বাড়ির বড়দেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। তাই সকলকে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হবে। যাঁরা একার হাতে সন্তানকে বড় করে তুলছেন, তাঁরা বন্ধু বা নিকট আত্মীয়ের সাহায্য নিতে পারেন। একার উপরে চাপ কমলে, ছোটদের জন্যও পরিবারে শান্তির পরিবেশ বজায় থাকবে।

ঘ) দেখবেন, ছোটরাও এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এখানে সামান্য অসতর্কতাই ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করুন। নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে তাকে জানান। তার ফলে তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সাবধান হবে। কিন্তু ইন্টারনেট যে শত্রু এই ভাবনাটা মাথায় ঢোকাবেন না।

ঙ) আর একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন, ছোটদের দিনের একটা বড় সময় এখন মোবাইল বা ল্যাপটপে কাটে। ফলে, স্ক্রিন টাইম বেশি হলে অল্প বয়সেই নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তাহলে কি করবেন? মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খারাপ এবং ভাল, দু’দিকই সন্তানের সামনে তুলে ধরুন। সময় নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে ডিভাইসের ‘পেরেন্টাল কন্ট্রোল’ সম্পর্কে জেনে রাখুন। তবে খুব বেশি বকাবকি করবেন না। বকাবকির মাধ্যমে সন্তানের মনে ভয় তৈরি হয়। ফলে লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। তাই ভুলেও বকাবকি নয়। জোর করে হাত থেকে মোবাইল বা ল্যাপটপ কেড়ে নেওয়াও নয়। 

চ) সন্তান ছোট থাকতে থাকতেই আর একটা জিনিস বাবা-মায়ের শেখানো দরকার। সুরক্ষিত এবং অসুরক্ষিত স্পর্শ। দেখুন, অল্প বয়সে সন্তানকে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষিত’ এবং ‘অসুরক্ষিত’ স্পর্শের পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত করা উচিত। প্রয়োজনে সে যেন আপনার কাছে অভিযোগ জানাতে পারে, এটা সেই দরজা খুলে রাখার চাবিকাঠি বলতে পারেন। স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতে এই ধরনের শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই শিশুকে অনেক ধরনের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে।

ছ) আর আপনার সন্তান যদি হয় বিশেষ ভাবে সক্ষম, তাহলে সেই সন্তানের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই বাবা-মা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। পাশাপাশি, এই ধরনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভালবাসা এবং স্নেহ অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। প্রয়োজনে থেরাপির সাহায্য নিতে হবে। তার থেকেও বড় কথা সন্তানের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন, ধৈর্য বা বিশ্বাস সন্তানের উপর যেন কোনটাই না হারায়। দেখবেন অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

জ) সর্বপরি, অল্প বয়সে ছোটদের মনে একরাশ কৌতূহল জমা থাকে। সেটা যে কোনো বিষয়ে হতে পারে। তাই উপযুক্ত জবাবে বাবা-মায়ের তা নিরসন করা উচিত। হ্যাঁ, একমাত্র আপনার তরফ থেকে পাওয়া সঠিক জবাবই সেইসব কৌতুহল ভেঙে দিতে পারে। খেলাধুলোর ক্ষেত্রে ‘ছেলেরা কাঁদে না’ বা ‘মেয়েদের মতো’, এই ধরনের শব্দবন্ধ ব্যবহার না করাই ভাল। মনে রাখবেন, শুধু সন্ধান প্রতিপালন করলেই হবে না, কথা খরচও করতে হবে বুঝে শুনে।‌


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন