সমকালীন প্রতিবেদন : স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার আসল কারণ মোবাইল? অত্যধিক জিপিএস ব্যবহারের কারণেই কি সবটা ভুলে যাচ্ছেন? ব্রেকফাস্টেও কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। দুপুরে কি খেয়েছেন রাতে মনে রাখতে পারছেন না তো? জানেন এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আসলে কি কি কারনে বাড়ছে? সামান্য একটা ফোন নম্বর মনে থাকছে না! পরিস্থিতি কিন্তু সাংঘাতিক দিকে এগোচ্ছে! কোন কোন দিকে আপনাকে নজর দিতে হবে? বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদন থেকে।
বয়স হলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে অল্প বয়সেই যদি সব ভুলতে শুরু করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, ‘ব্রেন ফগ’-এর কারণে এমন হচ্ছে। কি এই 'ব্রেন ফগ'? মস্তিস্কের এক সমস্যা। ধরুন, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা দিব্যি ঘুমিয়েছেন। তারপরও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ঠিক কাজ করছে না। চারিদিক কেমন যেন ধোঁয়াটে লাগছে।
কিংবা রাতে সঠিক পরিমাণে ঘুমোনের পর সকালে উঠে কাজ করতে গেলে ছোটোখাটো নানা ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। কথা বলতে গেলে কাকে কী বলছেন, যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন। ডাক্তারি ভাষায় এটাই 'ব্রেন ফগ'! এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। 'ব্রেন ফগ' এর কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে! যাঁর সঙ্গে এমনটা হয়, তাঁর মনে হয় সব কিছু ঘেঁটে গিয়েছে। কথা বলতে গেলে ভুল হয়। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়। ক্লান্ত লাগে। কাজে মন দিতে সমস্যা হয়। যে সমস্যা দূর করতে রোজের কিছু বদভ্যাস আপনাকে পাল্টাতে হবে।
প্রথম, ডিজিটাল মাধ্যমের উপর নির্ভরতা কমানো। আজকাল আপনার অনেক কাজই প্রায় করে দেয় স্মার্টফোন। ফোন নম্বর মনে রাখা, এমনকি ঠিকানা খুঁজতেও আর মাথা ঘামানোর দরকার পড়ে না। জিপিএস-গুগল ম্যাপ রাস্তার খুঁটিনাটি বলে দেয়। ফলে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশটিকে আর মনে রাখার জন্য বিশেষ পরিশ্রম করতে হয় না। ফলে স্মৃতির পাতাতেও মরচে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক এই কারণেই জিপিএস ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে হবে।
দ্বিতীয়, রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঘণ্টাখানেক মোবাইলে স্ক্রল করার অভ্যাস মস্তিষ্কের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। মোবাইলে একটানা 'রিল্' বা ভিডিয়ো দেখেন কেউ কেউ, এতে কিন্তু শরীরে স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের মাত্রা বাড়বে। শুধু তাই নয়, মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গিয়ে ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে। এতে মস্তিষ্কের ক্লান্তি বাড়বে যা ব্রেন ফগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
তৃতীয়, ব্রেকফাস্ট এর বিষয়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেকের মধ্যেই এই বদ অভ্যাসটা দেখা যায়। কিন্তু ভুলে যাবেন না, ব্যস্ততায় সকালের জলখাবার না খেলে শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন পাবে না। ফলে সকাল থেকেই গ্লুকোজ জারিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এর প্রভাব পড়বে মস্তিষ্কেও। অতএব ব্রেকফাস্ট মাস্ট।
চতুর্থ, আরেকটা জিনিস থেকে একদমই দূরে থাকুন। সেটা হল চিনি দেওয়া পানীয়। শুধু যে খাবারে চিনি মেশালে বিপদ হয় এমন নয়, প্রসেসড ফুডও সমান বিপজ্জনক৷ কারণ তাতে অ্যাডেড সুগার থাকে, তা সে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল হোক কি পাউরুটি, প্যাকেটের ফলের রস হোক কি বিয়ার, সস, কেচাপ, কুকিজ, ক্যান্ডি, মেয়োনিজ ও অন্যান্য স্যালাড ড্রেসিং, ঠান্ডা পানীয়৷ মনে রাখবেন, চিনি বা চিনিসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে হরমোনের তারতম্য হয়, যা থেকে স্মৃতিনাশ, মাইগ্রেন, অনিদ্রার সমস্যাও বাড়ে।
পঞ্চম, আরেকটা জিনিস মনে রেখে রোজ করুন। খুব বেশি করে গায়ে রোদ লাগান। ঘরের ভিতর যদি বেশি সময় কাটান, তা হলে তার প্রভাব মস্তিষ্কে পড়বেই। সে বাড়িতে থাকা হোক বা কাজের জায়গায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের ভিতর থাকলে এবং একটানা টিভি দেখা বা মোবাইলে ঘাঁটাঘাঁটি করে গেলে, স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়বে। গবেষণা বলছে, প্রকৃতির মাঝে না থাকা এবং গায়ে রোদ না লাগানোর কারণে, ভিটামিন ডি এর অভাব হতে পারে। এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে অবসাদ, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেবে।
এই পয়েন্টগুলোকে মাথায় রাখার পাশাপাশি আর একটা জিনিস করতে ভুলবেন না। ঘুমকে গুরুত্ব দিন। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। ঘুমোনোর আগে মোবাইল দেখার অভ্যাস ছাড়তে হবে। সঙ্গে করুন শরীর চর্চা। এতে মস্তিস্কের কোশ তরতাজা থাকে। সক্রিয় হয়। শরীরচর্চা করলে শরীর হালকা হয়। মনও চনমনে হয়। আর ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড ছেড়ে শাকসবজি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন