সমকালীন প্রতিবেদন : মাইগ্রেন থেকে শুরু করে হাঁটু, গোড়ালির ব্যথা। যে কোনো রোগ ওষুধ ছাড়াই নিমেষে দূর করবে "পঞ্চকর্ম"! কি এই "পঞ্চকর্ম" থেরাপি? জানেন কখন "পঞ্চকর্ম" থেরাপি নিতে হয় মানুষকে? ‘ডিটক্সিফিকেশন’বা শোধন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে আপনাকে। এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে শোধন করা হবে আপনাকে? বলতে পারেন এটা একটা জাদু। রয়েছে পাঁচটা ধাপ। সেগুলোর মাধ্যমেই শরীর থেকে টেনে বের করে দেওয়া হয় বিষ। কিন্তু সবাই এই শোধন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যেতে পারবে না। কাদের ক্ষেত্রে রয়েছে বিধি-নিষেধ? এই সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা হবে আজকের প্রতিবেদনে।
আজকাল হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি ছেড়ে মানুষ আবারো সেই ভরসা রাখছেন আয়ুর্বেদে। যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল সূত্রই হচ্ছে, সুস্থ মানুষের সুস্থতা মেনটেইন করা এবং রোগাক্রান্ত মানুষকে রোগমুক্ত করা। এর জন্য শোধন বা ডিটক্সিফিকেশনের চিকিৎসাক্ষেত্রে মূলত দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এক, শমন চিকিৎসা অর্থাৎ রোগ প্রশমনের বিবিধ উপায়। দুই, শোধন চিকিৎসা অর্থাৎ রোগকে সমূলে উৎপাটন করার বিবিধ পদ্ধতি, যা ডিটক্সিফিকেশন হিসেবে ধরা হয়।
এই শোধন শব্দটা সংস্কৃত শব্দ। যার গূঢ়ার্থ হল ‘শুদ্ধ’ অর্থাৎ পরিষ্কার করা। পরিষ্কার করা হবে আসলে আপনার শরীরকে। কিন্তু কখন আপনার শরীরকে শোধন করানোর দরকার আছে? সেটাও জেনে রাখা দরকার। অনেক সময় সাধারণ চিকিৎসায় রোগ কাবু হয় না। তখন ‘ডিটক্সিফিকেশন’বা শোধন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এতে কি হয়? শোধিত শরীরে ওষুধ খুব ভাল কাজ করে। আবার এটাও জেনে রাখুন, রোগ না হলেও ভাল থাকার জন্য শরীর শোধন করা যেতে পারে।
মূলত, এই শোধন চিকিৎসা পাঁচ ভাগে বিভক্ত। তাই এটির আর এক নাম ‘পঞ্চকর্ম’। যার প্রথম ধাপ –
বমন চিকিৎসা : শরীরের উপরিভাগ বা আপার পার্ট দ্বারা দূষিত দোষের অপসারণকে এককথায় ‘বমন চিকিৎসা’ বলে। এতে পাকস্থলীর দূষিত ও অপক্ক পদার্থসমুহ শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে।
বিরেচন চিকিৎসা : দেহের বিবিধ প্রকার দূষিত আবর্জনা ও পক্কাশয়ের দূষিত পিত্তকে মলের সাথে নির্গমনকে ‘বিরেচন’ বলে।
বস্তি চিকিৎসা : এই চিকিৎসাকে শোধন চিকিৎসার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বা অর্ধ চিকিৎসা বলা হয়, যেখানে বিভিন্ন প্রকার ঔষধি দ্রব্য সহযোগে ও ক্ষেত্রবিশেষে একক স্নেহ ও তরলকে এনেমা দ্বারা প্রবেশ করিয়ে শরীরকে শুদ্ধ করা হয়।
নস্য চিকিৎসা : বিভিন্ন প্রকার ঊর্ধজত্রু গত রোগে অর্থাৎ আপার ক্লাভিকুলার ডিজিজে নস্য শ্রেষ্ট চিকিৎসা যেখানে ভেষজ সমৃদ্ধ তেল বা চূর্ণ নাকের দ্বারা বিশেষ পদ্ধতিতে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
রক্তমোক্ষণ : এককথায় এটি হল শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কয়েকটা উপায়ে পরিমাণ মতো রক্ত বের করে বিভিন্ন কঠিন থেকে কঠিনতম রোগের সুচিকিৎসার পদ্ধতি।
এবার থাকবে আপনাদের জন্য সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। লঙ্ঘন,পাচন ইত্যাদি ঔষধ প্রয়োগে শরীরের দূষিত দোষকে শমন করা গেলেও তা পুনরায় দেহে রোগ আকারে প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু শোধন চিকিৎসার ফলে শুদ্ধ হওয়া শরীরে রোগের উদ্ভব ঘটেনা। অতএব, যখন কোনো রোগকে কোনওভাবেই বাগে আনা যায় না, তখন এই শোধন চিকিৎসা বা পঞ্চকর্ম থেরাপি রীতিমতো ব্রহ্মাস্ত্রের মতো কাজ করে।
কিন্তু আপনার শরীরের জন্য শোধন প্রয়োজন কিনা সেটা ঠিক করবে কে? মেদবহুল রোগী, অনিদ্রা বা অতি নিদ্রাতুর রোগী, দুর্বলরোগী, পাণ্ডু রোগী, বিবিধ ত্বক বিকার, উৎসাহহীনতায় ভুক্তভুগী রোগী সর্বোপরি রোগের মূলোৎপাটনের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা বিকল্পহীন। কিন্তু তারপরেও পঞ্চকর্ম থেরাপি নেওয়ার আগে অবশ্যই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
আর বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মূলত অবাধ্য রোগী, ক্রদ্ধ মনোভাবাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসার বিধান নৈব নৈব চ। তাই আবারও বলছি, পঞ্চকর্ম থেরাপি যেমন জাদুর মতো কাজ করে, তেমনি এই থেরাপি সেশনে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগোনো উচিত। রোগীর রোগ, রোগের তীব্রতা, রোগীর দেহবল, দোষের প্রাবল্য ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ঠিক করেন কোন ক্ষেত্রে কোন প্রকার চিকিৎসা উপযোগী হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন