Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩

লেজারের সাহায্যে ঘন জঙ্গল থেকে খোঁজ মিললো ‌প্রাচীন মায়া সভ্যতার

 

Ancient-Maya-civilization

সম্পদ দে : ‌বর্তমান সময়ে আমরা যে সভ্যতায় বাস করি, তা অত্যন্ত আধুনিক সভ্যতা। বিজ্ঞান ও গবেষণায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবে এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন, কেবলমাত্র বর্তমান সভ্যতাই উন্নত। আগেকার প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে আধুনিকতা ছিল না। তবে সেই সমস্ত ভাবনা-চিন্তাগুলিকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয় সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা এবং মায়া সভ্যতার মতো প্রাচীন, তবে আধুনিক ভাবনাচিন্তায় তৈরি করা সভ্যতাগুলি। 

আজকে কথা হচ্ছে সেইগুলির মধ্যে অন্যতম মায়া সভ্যতাকে নিয়ে। বর্তমান সময়ে গবেষকরা গবেষণা চালাচ্ছেন প্রায় প্রতিটি জিনিসের উপরেই। তেমনি তাদের গবেষণা চলছে প্রাচীন থেকে প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির ওপরেও। আর তাদের সেই গবেষণার কারণেই খোঁজ পাওয়া গেল প্রায় ২০০০ বছর আগের মায়া সভ্যতার শহরের ধ্বংসাবশেষ। আমেরিকার গুয়াতেমালার রেইন ফরেস্টের ঘন জঙ্গলের নিচে খুঁজে পাওয়া গেল এই লুকিয়ে থাকা প্রাচীন সভ্যতা।

আমেরিকার এই অঞ্চলে মায়া সভ্যতা অত্যন্ত প্রাচীন সময় থেকেই আছে। আগেও এই মায়া সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন এবং পিরামিড খুঁজে পাওয়া গেছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে মায়া সভ্যতার এই শহরটি বহু বছর ধরে ঘন জঙ্গলে বড় বড় গাছের পেছনে লুকিয়ে ছিল। সেই জন্য এতদিন ধরে এর খোঁজ পাওয়া যায় নি সহজে। 

তবে গবেষকদের দ্বারা আকাশপথে গু‌য়াতেমালার জরিপ করার সময় এই শহরের ধ্বংসাবশেষ নজরে পড়ে। উল্লেখ্য বিষয় এই যে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ থেকে ৫১ শতাংশ মানুষই মায়ান। মায়ান সংস্কৃতির আদিবাসী মানুষরাই বাস করতেন এই শহরে। এমনকি আমেরিকার এই শহরের জনসংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে, দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বেশ বড় অংশের বাস ছিল কেবলমাত্র এই শহরে।

প্রাচীন সভ্যতা হলেও তাকে ছোট ভাবা যাবে না একেবারেই। ৬৫০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্মৃত ২০০০ বছরের পুরনো এই শহরটি। আমেরিকা এবং মেক্সিকো সীমান্তের অনেকটা কাছে অবস্থিত এই প্রাচীন সভ্যতা। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি বড় দল ফ্রান্স এবং গুয়াতেমালার গবেষকদের সহযোগিতায় এই শহরের আবিষ্কার করেছেন। 

শহরটি মিরাডোর-কালাকমুল কার্স্ট বেসিন নামে পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের গবেষকরা গবেষণায় নেমে যে কেবলমাত্র পিরামিড এবং তার প্ল্যাটফর্মের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন তা নয়, বরং এত প্রাচীন সভ্যতা হওয়া সত্ত্বেও সেই সময়কার অবাক করে দেওয়া আধুনিক কারিগরির খোঁজও পেয়েছেন তারা।

ধ্বংসাবশেষে খুঁজে পাওয়া গেছে প্রায় ১১০ মাইলের থেকেও বেশি দীর্ঘ হাইওয়ে এবং নৌকো নিয়ে যাতায়াত করার জন্য নৌচলাচলের উপযোগী কজ্ওয়ে। যেকোনও সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা অবশ্যই অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। আর সেই ব্যাপারটাই প্রায় ২ হাজার বছর আগেও যথেষ্ট ভালোভাবেই জানতেন মায়া সভ্যতার মানুষরা।

এর আগেও আবিষ্কৃত প্রাচীন মায়া সভ্যতা দেখে রীতিমত চমকে গিয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সমস্ত গবেষকরা। আর এবারেও অন্য ফলাফল হলো না এর ক্ষেত্রে। গবেষকরা এই ভেবেই বেশ চমকপ্রদ যে, এখন থেকে প্রায় দুই-আড়াই হাজার বছর কিংবা ৩ হাজার বছর আগেও তারা কিভাবে এত নিখুঁত স্থাপত্য, নিকাশি ব্যবস্থা, উন্নত রাস্তাঘাটের প্ল্যানিং করেছিলেন এবং বানিয়েছিলেন।

বহু বছর লুকিয়ে থাকার পরে এই সভ্যতা আবিষ্কার করা গেলেও খুব একটা সহজ ছিল না এই পদ্ধতি। ঘন রেইন ফরেস্টের নিচে এই শহর লুকিয়ে থাকায় সহজে সনাক্তকরণ করা যাচ্ছিল না তা। সেই জন্য গবেষকরা রেডিও তরঙ্গের পরিবর্তে লেজারের ব্যবহার করেছিলেন এই সভ্যতার খোঁজ করার জন্য। 

গবেষণায় এমন লেজার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা কিনা রেইন ফরেস্টের ঘন জঙ্গল ভেদ করে তার নিচে কি ধরনের স্থাপত্য রয়েছে, সেই লেজার তা প্রকাশ করতে পারবে। বহু বছরের গবেষণার পরে খোঁজ পাওয়া বিশ্বের প্রাচীন আধুনিক সভ্যতাগুলির মধ্যে থেকে এই মায়া সভ্যতার শহরটি অন্যতম ছিল বলেই গবেষকদের দাবি।




‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন