Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২

TOUR : রাজা ভাতখাওয়া ও বক্সার জঙ্গলের বৈচিত্র‍্যময় কিছু কথা

 ‌

Rajabhatkhawa-and-Boxer-Jungle

বৈচিত্র‍্যময় রাজা ভাতখাওয়া ও বক্সার জঙ্গল

অজয় মজুমদার

উত্তরবঙ্গের রাজাভাতখাওয়া একটি ছোট্ট জনবসতি অঞ্চল৷ এই অঞ্চলের চারপাশে বক্সার জাতীয় উদ্যান৷ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ পরিদর্শনের জন্য অনুমতিপত্র এখান থেকে দেওয়া হয়৷ কেন রাজাভাতখাওয়া- রাজা কি ভাত খাচ্ছেন? না কি রাজা নামক কোনও ব্যক্তির কাছে ভাত চাওয়ার আকুতি? এর উত্তর দিতে পারে ইতিহাস- ইঞ্জিনিয়ার, হ্যামিল্টন সাহেবের নাম অনুসারে পার্শ্ববর্তী কালচিনি স্টেশন ও কালচিনি বাজারের নাম হ্যামিল্টনগঞ্জ রাখা হয়৷ 

সেই কালচিনি ও হ্যামিল্টনগঞ্জ লাগোয়া আরেকটি অঞ্চল হল- রাজাভাতখাওয়া৷ নামের পেছনে আছেন কোচবিহারের রাজা ধৈর্মেন্দ্র নারায়ন৷ তাঁর ভুটান থেকে স্বদেশে ফিরে আসা প্রথম ভাত খাওয়ার অমর কাহিনী। তবে সবই লোককথা। ধৈর্মন্ত্র নারায়ন ভুটানে বন্দী হয়েছিলেন৷ মুক্তি পেয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন৷ ফিরে আসার পর এই অঞ্চলে প্রথম ভাত খেতে বসেন। রাজার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করতে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হলো রাজাভাতখাওয়া। সব মিলিয়ে প্রকৃতির রানি ডুয়ার্সের সৌন্দর্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম রাজাভাতখাওয়া। ঐতিহাসিক দিক থেকেও এই স্থানটির একটা গুরুত্ব রয়েছে৷

বক্সার জাতীয় উদ্যানের বাঘ সংরক্ষন কেন্দ্র বা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৮৩ সালে৷ এটি পরিবেশ ও বনমন্ত্রক, ভারত সরকারের অধীনে৷ জঙ্গলটি আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে পড়ে৷ জঙ্গলের উত্তর সীমাটি হলো ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও সিঞ্চলা পর্বতমালা৷ তার উপর রয়েছে ভুটানের ফিপসু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ পূর্ব সীমায় আছে পশ্চিমবঙ্গ–অসম রাজ্য সীমা৷ তার ওপর আছে অসমের মানস জাতীয় উদ্যান। দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৩১ নং জাতীয় সড়ক৷ দক্ষিণ-পশ্চিমের চিলাপাতা বনাঞ্চলটি বক্সা ও জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে একটি এলিফ্যান্ট করিডোর হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এই ন্যাশনাল পার্কের উদ্ভিদকে দশটি ভাগে লালন পালনের জন্য এলাকা ভাগ করা হয়েছে৷ যেমন, ১) শুষ্ক ডেসিভুয়াল বনাঞ্চল উত্তর, ২)ভাবর ও তরাই শাল বনাঞ্চল (পূর্বে), ৩) পূর্ব হিমালয় আদ্র মিশ্র ডেসিডুয়াল বনাঞ্চল, ৪)উপ হিমালয় মাধ্যমিক সিক্ত মিশ্র বনাঞ্চল, ৫) সাব-মন্টেন প্রায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল, ৬) ক্রান্তিয় চির হরিৎ বনাঞ্চল (উওরে), ৭) পূর্ব হিমালয় উপক্রান্তিয় সিক্ত পার্বত্য বনাঞ্চল, ৮) আদ্র সাল সাভানা বনাঞ্চল, ৯) নিম্ন পলল সমভূমি বনাঞ্চল, ১০) শাবানা জঙ্গল। আমরা শুরুতেই বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম৷ সেখান থেকে এইসব অরণ্য ফ্লোরা ও ফনার বা উদ্ভিদ ও প্রানীর যে হিসাব পেলাম, তা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।

এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ বা ফ্লোরাগুলি হল‌‌– 

সেধা- বৈজ্ঞানিক নাম লেগারস্টোমিয়া পারভিফ্লোরা, তুন এর বৈজ্ঞানিক নাম সোভারলা টুনা, লালি-র বৈজ্ঞানিক নাম আমুরা ওলিছি, বেহেরার বৈজ্ঞানিক নাম মিনালিয়া বেলিরিকা। এছাড়াও, নদীর তীরগুলিতে-সিল্ক কটন ট্রি বা শিমুল পাওয়া যায়৷ উচ্চতায় বেশ অনেকটাই উঁচু, একরকম দৈত্যাকার৷ শিরিস-মিমোসা সিরিসা, সিমাম বা ভেলবাগমিয়া সিসো এবং খয়ের অ্যাকাশিয়া কেটে, চিউ জাতীয়-পার্ক এর উচ্চ অঞ্চলে জন্মায়- কার্টুন বা ক্যাস ক্যাসটানোপসিস ইন্ডিকা, কিম্ব বা কারওয়া আরবোরিয়া এবং গোধুল (আইল্যানথ্যাস গ্র্যানডিস) বক্সার গভীর জঙ্গলে টিক বা বৃদ্ধ সেগুন রয়েছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম- টেকটোনা গ্রানডিস।

এই অঞ্চলের অরন্যের উল্লেখযোগ্য ফনারা প্রাণীগুলি হলো- লেপার্ড বা চিতাবাঘ বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা পার্ভাস৷ এরা ১২ থেকে ১৭ বছর বাঁচে, এদের পরিবার হল ফিলিডি এবং বর্গ হল কার্নিভোরা অর্থাৎ মাংসাশী৷ এদের ওজন নানারকমের হয়। এবার পেলাম ক্লডেড লেপার্ড ১৮২১ সালে এই প্রাণীটি প্রথম চিন থেকে লন্ডনে যায়৷ এটি খুবই বিপজ্জনক প্রাণী৷ এর বৈজ্ঞানিক নাম নিওফিলিস নির্বালোসা৷ এই লেপার্ডের ওজন ১২ থেকে ২৩ কেজি৷ এদের গণ- কার্নিভোরা, এরা বনবিড়াল বলে খ্যাত৷ স্তন্যপায়ী শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত প্রাণী৷ এটি বিড়াল প্রজাতির খুব পুরনো প্রাণী৷‌





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন